December 22, 2024
জাতীয়

যুদ্ধাপরাধী কায়সারের আপিল রায় ১৪ জানুয়ারি

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টির সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিলের রায় জানা যাবে আগামী ১৪ জানুয়ারি।  রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারকের আপিল বেঞ্চে গতকাল মঙ্গলবার এ আপিল মামলার রায়ের তারিখ ঠিক করে দেয়।

এই আপিল বেঞ্চের অন্য তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা এবং বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আসা এটি নবম মামলা, যা রায়ের পর্যায়ে এল।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনালে কায়সারের মৃত্যুদণ্ডের রায় আসে ২০১৫ সালে। আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের রায়ের এক মাসের মধ্যে খালাস চেয়ে আপিল করেন দণ্ডিত এই যুদ্ধাপরাধী।

এরপর ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট এক আদেশে আপিল বিভাগ আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের নির্দেশ দেয়। ওই বছর ১০ অক্টেবর শুনানি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও আসামিপক্ষের সময়ের আবেদনে তা পিছিয়ে যায়। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকার পর গত ১০ জুলাই সর্বোচ্চ আদালতে এ মামলার শুনানি শুরু হয়। যুক্তি উপস্থাপন শেষে মঙ্গলবার তা রায়ের পর্যায়ে আসে।

একাত্তরের মুসলিম লীগ নেতা কায়সারের পক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ ও এ এম আমিনউদ্দিন মানিক।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধের দায়ে সৈয়দ কায়সারকে ২০১৫ সলের ২৩ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। ১৯৭১ সালে দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ‘কায়সার বাহিনী’ গঠন করে ওই দুই জেলায় যুদ্ধাপরাধে নেতৃত্ব দেন তখনকার এই মুসলিম লীগ নেতা। জিয়াউর রহমানের আমলে তিনি হয়ে যান বিএনপির লোক, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সময় জাতীয় পার্টির।

ট্রাইব্যুনালের বিচারক তার রায়ে বলেন, সৈয়দ কায়সারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা ১৬টি অভিযোগের মধ্যে ১৪টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয় ৩, ৫, ৬, ৮, ১০, ১২ ও ১৬ নম্বর অভিযোগে, যার মধ্যে দুই নারীকে ধর্ষণের ঘটনা রয়েছে। এই দুই বীরাঙ্গনার মধ্যে একজন এবং তার গর্ভে জন্ম নেওয়া এক যুদ্ধশিশু এ মামলায় সাক্ষ্যও দেন।

সেই প্রসঙ্গ টেনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আপিল শুনানি শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আমি আজকে আদালতে জোরালোভাবে আবেদন জানিয়েছি। ধর্ষণের দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে একটি হল হিরামনি সাঁওতালকে ধর্ষণ। কায়সার পাকিস্তানি আর্মিকে ইশারা দিয়ে ভিতরে নিয়ে যায়। পরে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

পরবর্তীতে তিনি একটি সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সেই সন্তানটিকে দেখতে সাঁওতালদের মত নয়। এ কারণে প্রতিনিয়ত তাকে ধীক্কার পেতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে না পেরে তিনি (হিরামনি) আত্মহত্যা করেছিলেন।

আরেকজন হলেন মাজেদা। যাকে কায়সার পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তিনিও ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। তারও একটি মেয়ে হয়েছিল। সে মেয়েটিও সারাটি জীবন ধীক্কৃত হয়ে জীবন-যাপন করেছেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একজন মানুষকে হত্যা করলে তখনই শেষ হয়ে যায়। কিন্তু ধর্ষণের শিকার হলে প্রতিদিন তার মৃত্যু হয়। এটা তার জন্য মৃত্যু,পরিবারের জন্য মৃত্যু। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ মারা গেলে ওই পরিবারের সদস্যরা গর্ব করে বলতে পারেন যে, তার পরিবারের লোক শহীদ হয়েছে। কিন্তু ধর্ষণের ঘটনায় কেউ বলতে পারে না এই যুক্তি দেখিয়ে আমি বলেছি, এই দুটি অভিযোগে যাতে মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *