যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিশংসিত ডনাল্ড ট্রাম্প
ক্ষমতার অপব্যবহার ও কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস হয়েছে।
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি গুরুতর অভিযোগে প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হলেন। এখন তিনি প্রেসিডেন্ট পদে থাকতে পারবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত হবে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে।
বিবিসি জানিয়েছে, আসছে জানুয়ারিতে সিনেটে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে ট্রাম্পকে। শুনানি শেষে অপসারণের পক্ষে দুই তৃতীয়াংশ ভোট পড়লে প্রেসিডেন্ট পদ ছাড়তে হবে ট্রাম্পকে। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে সেই সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
ট্রাম্পের আগে প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসন এবং বিল ক্লিনটন প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন। তবে কাউকেই সিনেট পদচ্যুত করেনি।
বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনে যখন প্রতিনিধি পরিষদের ভোটাভুটি চলছে, ট্রাম্প তখন ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য মিশিগানে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ব্যস্ত।
ব্যাটল ক্রিকে সমর্থকদের হর্ষধ্বনির মধ্যে তিনি বলেন, “আমরা যখন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি, মিশিগানের জন্য লড়াই করছি, কংগ্রেসে ওই উগ্র বামেরা, যারা হিংসা আর বিদ্বেষের মধ্যে ডুবে আছে, আপনারা দেখছেন তারা কী করছে।”
আর অভিশংসন ভোটের পর হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট আত্মবিশ্বাসী, সিনেটের বিচারে তিনি ‘সম্পূর্ণ নির্দোষ’ প্রমাণিত হবেন।
ভোটাভুটিবিবিসির খবরে বলা হয়, বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসন প্রস্তাব নিয়ে বিতর্কের শুরু হয় রিপাবলিকান পার্টির প্রতিনিধিদের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে, যারা এই প্রক্রিয়া কীভাবে চলবে তা নিয়ে ভোটাভুটির দাবি তোলেন। এরপর সে বিষয়ে ভোটাভুটি হয় এবং ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দুই অভিযোগের মেরিট নিয়ে দশ ঘণ্টা বিতর্ক চলে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল দুটো। ১. প্রেসিডেন্ট তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে ইউক্রেনের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিলেন। ২. অভিশংসনের তদন্তে সহযোগিতা করতে অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের কাজে বাধা সৃষ্টি করেছেন।
স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় ওই দুই অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাম্পকে অভিশংসন করা হবে কি না- সেই প্রশ্নে শুরু হয় ভোটাভুটি।
দুটি অভিযোগেই ট্রাম্পকে ইমপিচ করার প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে পাস হয় দলীয় মতামতের ভোটে। ডেমোক্র্যাটদের প্রায় সবাই অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। অন্যদিকে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্যরা ভোট দেন বিপক্ষে।
প্রথম অভিযোগ ২৩০-১৯৭ ভোটে এবং দ্বিতীয় অভিযোগ ২২৯-১৯৮ ভোটে অনুমোদন করে প্রতিনিধি পরিষদ।
যে যা বললেনস্পিকার ন্যান্সি পেলোসির উদ্বোধনী ভাষণের মাধ্যমে বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে ইমপিচমেন্ট প্রস্তাবের বিতর্ক শুরু হয়।
ডেমোক্র্যাট পেলোসি বলেন, “শত শত বছর ধরে আমেরিকানরা গণতন্ত্র রক্ষার জন্য লড়াই করেছে, প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রজাতন্ত্রের দর্শন আজ হোয়াইট হাউজের কর্মকাণ্ডে হুমকির মুখে পড়েছে।
“আমরা যদি এখনই উদ্যোগী না হই, তাহলে তা হবে দায়িত্ব এড়ানো। প্রেসিডেন্টের দায়িত্বহীন আচরণ আজ ইমপিচমেন্টকে জরুরি করে তুলেছে, এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। তিনি আমাদের জন্য অন্য কোনো সুযোগ রাখেননি।”
প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির নাতি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রতিনিধি জো কেনেডি বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে সরাসরি নিজের সন্তানদের নাম ধরে তাদের উদ্দেশে ব্যাখ্যা করেন, কেন তিনি ইমপিচমেন্টের পক্ষে।
তিনি বলেন, “প্রিয় এলি ও জেমস: এটা এমন এক মুহূর্ত, যার কথা তোমরা পরে ইতিহাসের বইতে পড়বে।”
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষমতাকে নিজের জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের আনেন ম্যাসাচুসেটসের এই কংগ্রেস সদস্য।
অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির জ্যেষ্ঠ নেতা ডো কলিন্স ‘অবৈধভাবে পক্ষপাতমূলক’ তদন্ত চালানোর অভিযোগ তোলেন ডেমোক্র্যাটদের বিরুদ্ধে। তার ভাষায়, এই ইমপিচমেন্টর প্রস্তাব আগে থেকেই ঠিক করা।
আর রিপাবলিকান ব্যারি লাউডারমিল্ক এই অভিশংসন প্রক্রিয়াকে তুলনা করেন যিশু খ্রিস্টকে ক্রুসিফিকেশনের সঙ্গে।
বিবিসি লিখেছে, ইমপিচমেন্টের চূড়ান্ত বিতর্ক শুরু হওয়ার এক দিন আগে থেকেই রাজপথে সরব ছিলেন ট্রাম্পবিরোধীরা। নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে মঙ্গলবার রাতে শত শত মানুষের জমায়েত থেকে শ্লোগান দেওয়া হয়- ‘আইনের ঊর্ধ্বে কে আছে? কেউ নয়, কেউ নয়’।