মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে পারে বিরোধীরা
মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বাধ্য করাতে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ভারতীয় সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা ভাবছে। আজ মঙ্গলবার বিরোধী জোটের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়, সরকার একান্তই আলোচনায় রাজি না হলে শেষ পর্যন্ত এ অস্ত্র প্রয়োগ করতে হবে।
অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হলে প্রস্তাবের পক্ষে অন্তত ৫০ সংসদ সদস্যকে সমর্থন জানাতে হয়। মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল তেলুগু দেশম পার্টি। আলোচনার পর সেই প্রস্তাব ৩২৫-১২৬ ভোটে পরাস্ত হয়েছিল।
মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের দাবিমতো মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করতে চাইছে না সরকার। মুলতবি প্রস্তাব গৃহীত হলে বিরোধীরা সরকারকে তিরস্কার করতে পারে। সরকারের জবাবদিহি চাইতে পারে। সরকারকে নির্দিষ্ট প্রশ্নগুলোর জবাব দিতে বাধ্য করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পিঠে পাল্টা প্রশ্ন করতে পারে।
মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণ করার অর্থ পরিস্থিতির গুরুত্ব স্বীকার করে নেওয়া। সভার সব কাজ বন্ধ রেখে ওই প্রস্তাবই একমাত্র বিবেচিত হয়। সংগত কারণেই সরকার মুলতবি প্রস্তাব গ্রহণে রাজি নয়। তার বদলে তারা অন্য ধারায় স্বল্প সময়ের আলোচনায় আগ্রহী। কিন্তু বিরোধীরা তা চায় না। ফলে সরকার ও বিরোধীদের টানাপোড়েনে ব্যাহত হচ্ছে লোকসভা ও রাজ্যসভার স্বাভাবিক কাজকর্ম। আজ মঙ্গলবারও দুই কক্ষের দৃশ্য ছিল তেমনই। দুপুরে রাজ্যসভায় বিরোধীদের মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিবাদে তাঁরা ওয়াকআউট করেন। এর পর সেখানে বিল পাস করানো হয়। লোকসভায় বিল পাস করানো হয় হট্টগোলের মধ্যে।
‘ইন্ডিয়ার’ নেতারা বুঝে গেছেন, সরকার কোনোভাবেই মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের দাবি অনুযায়ী আলোচনা মানবে না। ফলে তাঁরা কৌশল হিসেবে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা ভাবছেন। নিয়ম অনুযায়ী অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেওয়া হলে তা অগ্রাহ্য করার কোনো উপায় থাকে না। অনাস্থা যেহেতু সরকারের বিরুদ্ধে, সেহেতু প্রধানমন্ত্রীকেই তার জবাব দিতে হয়। মণিপুর নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে বাধ্য করাতে না পেরে বিরোধী নেতারা তাই এ পথ বেছে নিতে চাইছেন।
বিরোধী নেতারা জানেন, ভোটাভুটিতে অনাস্থা প্রস্তাব পরাস্ত হবে। তারপরও তাঁরা সরকারের সমালোচনা করতে পারবেন; যা বলতে চাইছেন, তা বলতে পারবেন এবং প্রধানমন্ত্রীকে মুখ খোলাতে বাধ্য করবেন।
সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি আজ মঙ্গলবার বিরোধী এই কৌশল সম্পর্কে বলেন, বিরোধীরা একবারই মোদি সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছিল ২০১৮ সালে। পরের বছর লোকসভায় বিজেপির ২৮২ থেকে বেড়ে ৩০৩ হয়। এবার আনলে বিজেপির আসন ৩০৩ থেকে বেড়ে ৩৩৫ হবে।
সংসদেরে বর্ষাকালীন অধিবেশন শুরুর দিনে সভাকক্ষের বাইরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে ৩৬ সেকেন্ড কথা বলেছিলেন। কিন্তু লোকসভা বা রাজ্যসভা কোথাও একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। মঙ্গলবার বিজেপি সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে অবশ্য তুলাধোনা করেন। বলেন, নামে ‘ইন্ডিয়া’ থাকলেই কিছু বোঝায় না। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির নামে ‘ইন্ডিয়া’ ছিল। (সন্ত্রাসবাদী সংগঠন) ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন বা পিপলস ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়াতেও ‘ইন্ডিয়া’ শব্দ রয়েছে। তাতে কিছু হয় না।
সংসদীয় দলের বৈঠকের পর বিজেপি নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এত দিশাহীন বিরোধী পক্ষ তিনি আগে কখনো দেখেননি। মোদির বিরোধিতা করা ছাড়া তাদের আর কোনো চিন্তা নেই।
বিরোধীরা মনে করছেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠন বিজেপিকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করে রেখেছে। ‘ইন্ডিয়া’ নামটি শাসক দলকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। বারবার তাই প্রধানমন্ত্রী ‘ইন্ডিয়া’কে আক্রমণ করছেন।
রাজ্যসভায় বিরোধী নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এ প্রসঙ্গের অবতারণা করে বলেন, ‘আমরা সবাই মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করছি। অথচ উনি সভা এড়িয়ে বাইরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ে কথা বলছেন।’
আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করে মুখ খোলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কেরালায় এক আয়ুর্বেদ চিকিৎসালয়ে তিনি হাঁটুর ব্যথা কমানোর চিকিৎসা করাচ্ছেন। সেখান থেকে টুইট করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রাহুল বলেন, ‘আমাদের যা খুশি, তা–ই বলতে পারেন। তবে আমরাই “ইন্ডিয়া”। মণিপুরের ক্ষত আমরাই দূর করব। সেখানকার প্রত্যেক নারী ও শিশুর চোখের জল মুছে দেব। সেখানকার মানুষদের ভালোবাসা ও শান্তি ফিরিয়ে দেব। মণিপুরে আমরা ভারতের আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করব।’
ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক