মোংলায় স্কুল শিক্ষিকার শ্লীলতাহানীর ঘটনায় বিভিন্ন মহলে তোলপাড়
মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি
মোংলার হলদিবুনিয়ায় এক স্কুল শিক্ষিকার শ্লীলতাহানীর ঘটনায় বিভিন্ন মহলে তোলপাড় চলছে। এ ঘটনার নেপথ্যে খৃষ্টান সম্প্রদায়ের দু’প্রতিবেশীর জমির সীমানা প্রচীর নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ। স্থানীয় ক্যাথলিক মিশনের ধর্মযাজকসহ জনপ্রতিনিধিরাও কয়েক দফায় এ বিরোধ মিমাংসার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ফলে সীমানা প্রচীর নির্ধারণ নিয়ে দু’পরিবারের দ্বন্ধে পক্ষ-বিপক্ষের অবস্থানে জড়িয়ে পড়েছেন গ্রামের খৃষ্টান সম্প্রদায়। আর এতে গ্রামবাসির মধ্যে ক্ষোভ উত্তেজনাও বাড়ছে। এ অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও তদন্তে যান বাগরেহাট জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
সরোজমিন ঘুরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে- মোংলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের (পরস্পর আত্মীয়) দিলিপ হালদার ও প্রতিবেশী রবিন মল্লিক পরিবারের মধ্যে বছর দু’য়েক আগ থেকেই বাড়ির সীমানা প্রাচীর নিয়ে বিরোধ চলছিল। সরকারি ভূমি জরিপকারীসহ চিলা ও চাঁদপাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রথম দফায় এ বিরোধ মিমাংসা করে। কিন্তু এতে রবিন মল্লিকের মনোভুত না হওয়ায় এ দ্বন্ধ থেকে যায় দু’পরিবারের মধ্যে। স্থানীয় ক্যাথলিক মিশনের ধর্মযাজক সহ জনপ্রতিনিধিরাও কয়েক দফায় এ বিরোধ মিমাংসার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।
গত ১৫ অক্টোবর দুপুরে দিলিপ হালদার সীমানা প্রচীরের ঘেরা-বেড়া সংস্কার করতে গেলে প্রতিপক্ষ রবিন মল্লিকের স্ত্রী মারিয়া মল্লিক, কন্য মিশনারী স্কুলের শিক্ষিকা প্রনতি মল্লিক বাঁধা দেয় এবং বাকবিতান্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায় দু’পরিবারের নারী-পুরুষরা পরস্পর বিরোধী হামলা ও পাল্টা হামলায় লিপ্ত হলেও দু’পরিবারের ৪-৫ জন আহত হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে আহত মারিয়া মান্না হালদার (৫০) ববিতা হালদার (৪০) এবং প্রনতি মল্লিককে তাৎক্ষণিক মোংলা উপজেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বুধবার বিকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য আহতদের মধ্যে প্রণতি মল্লিককে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত প্রনতি’র মা মারিয়া মল্লিক জানান- তার মেয়েকে প্রতিপক্ষের বখাটে যুবকরা কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। প্রাচীর নিয়ে সৃষ্ট ঘটনার সময় ওই বখাটেরা তার মেয়েকে বেধড়ক মারধর করে।
অপরদিকে দিলিপ হালদার জানান- তার পরিবারের সবাই ঢাকায় বসবাস করেন, মাঝে মধ্যে গ্রামে বেড়াতে আসেন। ঘটনার দিন তিনি প্রচীরের তার কাঁটার বেড়া সংস্কার করতে গেলে প্রনতি মল্লিক, বোন সুচিত্রা ও তার মা মারিয়া মল্লিক তার ওপর চড়াও হয়। এ পরিস্থিতিতে স্ত্রী মারিয়া মান্না হালদার ও বাড়িতে বেড়াতে আসা তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া ছেলে দিপ্ত হালদার ও ভাইপো পিয়াস হালদার এগিয়ে গেলে প্রতিপক্ষরা তাদের জুতা পেটা করে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন- ছাগল নিয়ে বিরোধের জের ধরে ছোট ভাই তপন হালদারের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ১৬ এপ্রিল প্রণতি মল্লিক বাদী হয়ে শ্লীলতাহানী ও ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করে হয়রানী করছে। এছাড়া স্কুল শিক্ষিকা প্রণতিকে কু-প্রস্তাবের বিষয়টি মিথ্যা ও বানোয়াট বলে জানান তিনি। পেশাগত কারণেস্বপরিবারে ঢাকায় থাকার সুযোগ নিয়ে প্রতিপক্ষরা নানা অজুহাতে পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন বলে তার অভিযোগ। এদিকে দু’পরিবারে সীমানা প্রাচীরের এ দ্বন্ধে এখন পক্ষে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন হলদিবুনিয়া গ্রামের খৃষ্টান সম্প্রদায়। আর এ নিয়ে ক্রমেই গ্রামবাসির মধ্যে ক্ষোভ উত্তেজনা বাড়ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। এর আগে দুপুরে মোংলা থানার পুলিশ পরিদর্শক ইকবাল বাহার চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও থানা যুবলীগের সভাপতি ও মিঠাখালী ইউপি চেয়ারম্যান ইস্রাফিল হাওলাদার, চাদপাই ইউপি চেয়ারম্যান মোল্লা তারিকুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এ বিষয় মোংলা থানার পুলিশ পরিদর্শক ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, মারামারির ঘটনায় ও মামলা গ্রহনে আগ্রহী থাকলেও মিশনারী ধর্মযাজকের অনুমতির অজুহাত দেখিয়ে এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি।