মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল: জরুরি অবস্থা ‘জারির পথে’ ট্রাম্প
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করতে জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
অবৈধ অভিবাসন রুখতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে সীমান্তে যে কোনো মূল্যে স্থায়ী বেষ্টনী নির্মাণের প্রতিশ্র“তি ছিল ট্রাম্পের। নির্মাণ কাজ শুরু করতে চলতি বছর কংগ্রেসের কাছে ৫৭০ কোটি ডলারও চেয়েছিলেন তিনি। ডেমোক্রেটদের সঙ্গে এ নিয়ে মতদ্বৈততায় গত বছরের শেষ থেকে টানা ৩৫ দিন কেন্দ্রীয় সরকারের এক চতুর্থাংশ বিভাগ ও সংস্থায় ‘অচলাবস্থা’ দেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
আরেক দফা অচলাবস্থার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়ালের জন্য ১৩০ কোটি ডলারের বরাদ্দ দিয়ে ফেব্র“য়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে কংগ্রেস সদস্যরা নতুন একটি চুক্তিতে পৌঁছালেও তা ট্রাম্পের মনমতো না হওয়ায় ‘জরুরি অবস্থা’ জারির সম্ভাবনা প্রকট হয়ে ওঠে, জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের রিপাবলিকান-ডেমোক্রেট সদস্যদের মধ্যে সমঝোতায় ‘অখুশি’র কথা জানিয়েছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী এ সংক্রান্ত বিলটি সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়ার পর তাতে স্বাক্ষর করবেন কিনা তা নিয়ে ‘সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন’ বলেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের দুই কক্ষে বিরাট ব্যবধানেই সীমান্ত নিরাপত্তা বিলটি পাস হয়। হোয়াইট হাউজ পরে জানায়, ‘অচলাবস্থা’ এড়াতে ট্রাম্প ওই বিলে স্বাক্ষর করবেন।
প্রেসিডেন্ট একইসঙ্গে কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে সেনাখাতের বরাদ্দ দেয়াল নির্মাণ খাতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও এক বিবৃতিতে জানিয়েছে তারা।
“দেয়াল নির্মাণ, সীমান্ত সুরক্ষা ও দেশের নিরাপত্তার বিষয়ক প্রতিশ্র“তি পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি জাতীয় নিরাপত্তা ও সীমান্তে মানবিক সংকট মোকাবেলায় জরুরি অবস্থা জারিসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন,” বলেছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স।
ডেমোক্রেটরা এ পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করে এর মাধ্যমে ট্রাম্প ‘ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার’ ও ‘বেআইনী কার্যক্রম’ করতে যাচ্ছেন বলে সতর্ক করেছে। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জরুরি অবস্থা জারি করলে তা আইনী প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে পারে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। বৃহস্পতিবার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ও সিনেটের ডেমোক্রেট নেতা চাক শুমার এক যৌথ বিবৃতিতে ওই সম্ভাবনা আরও প্রবল হয়েছে।
“জরুরি অবস্থা জারি হবে একটি বেআইনী কাজ, প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। এটি হবে তার দেওয়া প্রতিশ্র“তি ভাঙার একটি মরিয়া চেষ্টা, যেখানে দেয়াল নির্মাণের অর্থ মেক্সিকোর কাছ থেকে আদায়ের কথা দিয়েছিলেন তিনি। তিনি মেক্সিকোকে রাজি করাতে পারেননি। এখন মার্কিন জনগণ ও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তিনি তার এ অকার্যকর ও খরুচে দেয়ালের অর্থ নিতে চান। করদাতাদের অর্থে দেয়াল নির্মাণের কাজ শুরু করতে এখন প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের চারপাশ ঘিরে মরিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছেন,” বলেছেন দুই ডেমোক্রেট শীর্ষ নেতা।
মার্কিন কংগ্রেস যে কোনো মূল্যে ‘সাংবিধানিক কর্তৃত্বকে রক্ষা করবে’ বলেও প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন তারা।
রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা শুরুর দিকে চুক্তি অনুযায়ী সীমান্ত সুরক্ষা বিলে স্বাক্ষরে প্রেসিডেন্টের প্রতি আহŸান জানালেও পরে ‘জরুরি অবস্থা’ জারির ব্যাপারেও তাদের সম্মতির কথা খোলামেলাই বলেছেন।
“সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিতে যে কোনো পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়টিই বিবেচনা করতে পারেন প্রেসিডেন্ট,” বলেছেন সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জরুরি অবস্থা জারি হলে প্রেসিডেন্টের হাতে কিছু বিষয়ে আগধ ক্ষমতা চলে আসবে, যা ব্যবহার করে তিনি কংগ্রেসকে পাশ কাটাতে পারবেন।
ওই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে তিনি সামরিক কিংবা দুর্যোগ খাতের বরাদ্দের অর্থ দেয়াল নির্মাণে নিয়ে যেতে পারবেন।
মেক্সিকো সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতিই ‘জরুরি অবস্থা’ জারির পরিস্থিতি গৃষ্টি করেছে বলে দাবি করছেন ট্রাম্প। কেবল নভেম্বরেই প্রতিদিন দুই হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে হয় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে কিংবা গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। সমর্থকরা একে ‘চরম সংকটপূর্ণ অবস্থা’ অ্যাখ্যা দিলেও একমত নন ট্রাম্পবিরোধীরা।
তাদের মতে, দশককাল আগেও একবার একইরকম পরিস্থিতির গৃষ্টি হয়েছিল। সেবার হন্ডুরাস ও অন্যান্য দেশ থেকে প্রতিদিনই হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী মার্কিন সীমান্তে ভিড় করেছিল। তখন জরুরি অবস্থা জারি না করে পরিস্থিতি সামাল দেয়া গেলে, এখনও সম্ভব, ভাষ্য তাদের।