মুন্সীগঞ্জে জ্বরে ভুগে চাচি-ভাতিজার মৃত্যুতে আতঙ্ক, তদন্ত কমিটি গঠন
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়া সংলগ্ন জসলদিয়া গ্রামে জ্বরে ভুগে মাত্র ১৬ ঘণ্টার ব্যবধানে চাচি ও ভাতিজার মৃত্যুর পর পরিবারে তৈরি হয়েছে চীনের সেই প্রাণঘাতী নোভেল করোনাভাইরাসের আতঙ্ক।
তবে জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলছেন, এটি করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যুর ঘটনা বলে তারা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন না। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
জসলদিয়া গ্রামের মীর সোহেলের তিন বছর বয়সী ছেলে মীর আব্দুর রহমান রোববার গভীর রাতে জ্বরে আক্রান্ত হয়। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের ভাষ্য। এর আগে রোববার সকাল ৮টার দিকে রহমানের চাচা মীর জুয়েলের স্ত্রী শামীমা বেগম (৩৪) একইভাবে মারা যান।
শামীমা বেগমের দেবর মীর শিবলু জানান, তার ভাবি সেদিন সকালে জ্বর জ্বর অনুভব করছিলেন। ধীরে ধীরে তার জ্বর বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে চাক চাক রক্তের দাগ দেখা যায়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
শিবলু জানান, রাতে আব্দুল রহমানের যখন জ্বরে পড়ল, তখন তার শরীরেও একইরকম চাক চাক রক্তের দাক দেখা দিয়েছিল। শামীমাকে আগেই দাফন করা হলেও রহমানের লাশ তারা চিকিৎসককে দেখানোর জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যান। এরপর খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের একটি মডিকেল টিম, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডবিøউএইচও) প্রতিনিধি এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা সোমবার ওই গ্রাম পরিদর্শন করেন।
জেলার সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, চীনে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর বিমানবন্দরে আলাদা সতর্কতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চীন থেকে যারা আসছেন তাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এখনও কারও মধ্যে ওই রোগ শনাক্ত হয়নি।
এ পরিবারের কেউ গত ১৪ দিনের মধ্যে বিদেশে যায়নি বা বিদেশ থেকে ফেরত আসেনি। সুতরাং প্রথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে এ মৃত্যুর কারণ করোনাভাইরাস নয়। তাছাড়া এ পরিবারের কেউ এর মধ্যে খেজুরের রসও খায়নি। ফলে নিপা ভাইরাস বলেও সন্দেহ করা যাচ্ছে না।
তাহলে কী কারণে জ্বর হয়ে এত অল্প সময়ের মধ্যে চাচি-ভাতিজার মৃত্যু হল- তা বোঝার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন বলেন, মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন কনসালেটেন্টের নেতৃত্বে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ও সিভিল সার্জন অফিসের একটি মেডিকেল অফিসার আছেন এই কমিটিতে।
চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে কেড়ে নিয়েছে ৮১ জনের প্রাণ, সংক্রমিত হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষের দেহে। চীনের বাইরে আরও ১২টি দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। সাধারণ ফ্লুর মতই হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ ভাইরাস ছড়াতে পারে মানুষ থেকে মানুষে।
এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। পরিণতিতে ঘটতে পারে মৃত্যু। নোভেল করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। ভাইরাসটির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হল, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন বা এ ভাইরাস বহন করছেন- তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
শামীমা ও রহমানের মৃত্যুর কারণ হিসেবে করোনাভাইরাসের সন্দেহ কেন হল জানতে চাইলে মীর শিবলু বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প কাছাকাছি। এছাড়া জসলদিয়া গ্রামেই জসলদিয়া পানি শোষনাগার প্রকল্প। এসব প্রকল্পে চীনা শ্রমিকরাও কাজ করছে। আশপাশের এলাকায় চীনা নাগরিকদের বসবাস ও বিচরণ রয়েছে। মূলত এ কারণেই তাদের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
তবে বাংলাদেশে এখনও কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি জানিয়ে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, এ বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করা হচ্ছে। প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় মিলে এ বিষয়ে সকলকে সর্তক থাকার আহŸান জানানো হচ্ছে।
লৌহজং উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. রাশেদুজ্জামান এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. কামরুল হাসান পাটোয়ারীও সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলে নমুনা সংগ্রহ করেছেন।
ডা, কামরুল বলেন, প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া ঢাকায় রোগতত্ত¡, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটেও (আইডিসিআর) নমুনা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।