মুজিববর্ষে ঢাকায় আসছেন স্টেফি গ্রাফ-শারাপোভা-সানিয়া মির্জা!
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক যে খেলাগুলো আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে, তার মধ্যে টেনিসের কর্মসূচি ছিল তিনটি। এক. বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক টেনিস প্রতিযোগিতা, দুই. বঙ্গবন্ধু জাতীয় টেনিস কার্নিভাল এবং তিন. বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ জাতীয় টেনিস প্রতিযোগিতা। এ ছাড়াও ফেডারেশনটি আয়োজন করতে যাচ্ছে প্রিমিয়ার লিগ। ‘বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার টেনিস লিগ’ নামের এই আয়োজনই হতে যাচ্ছে ‘মুজিবর্ষে’ টেনিসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট। এটিই হবে দেশে টেনিসের প্রথম কোনো লিগ।
বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. মাসুদ করিম এবং ফেডারেশনের কোষাধ্যক্ষ সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মোহাম্মদ আসলাম আজ (বৃহস্পতিবার) ‘বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার টেনিস লিগ’ আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন জাগো নিউজকে।
বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের নিবন্ধিত কিছু ক্লাব এবং লিগের আকর্ষণ বাড়াতে দেশের দুই জনপ্রিয় ক্লাব মোহামেডান-আবাহনীসহ আরো কয়েকটি ক্লাব নিয়ে হবে এই লিগ। শেখ মোহাম্মদ আসলাম জানিয়েছেন, ‘মোহামেডান, আবাহনী, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ওয়ারি ক্লাব ও আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব এ লিগে আমন্ত্রিত দল হিসে অংশ নেবে। লিগ আকর্ষণীয় করতেই দেশের জনপ্রিয় ক্লাব দুটিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা খেলবে বলে সম্মতিও দিয়েছে।’
টেনিস ফেডারেশনের পরিকল্পনা ২৪ দল নিয়ে এই লিগ আয়োজন করার। প্রতিটি দলকে অংশগ্রহণ ফি দেয়া হবে এবং চ্যাম্পিয়ন দলকে প্রাইজমানি দেয়া হবে ৫ লাখ টাকা, রানার্সআপ দল পাবে ৩ লাখ। আগামী ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে লিগের উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ করিম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে ফেডারেশনের আছে মহা পরিকল্পনা। বিশ্বের কয়েকজন টেনিস তারকাকে আনার পরিকল্পনা করেছে ফেডারেশন। ‘আমরা কয়েকটি নাম নিয়ে কাজ করছি। যারা বর্তমানে খেলছেন তাদের আনা মুশকিল। তবে খেলা ছেড়ে দিয়েছেন এমন বিশ্ব তারকা কিংবা আমাদের এ অঞ্চলের কোনো সুপারস্টারকে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনার চেষ্টা করবো’-বলেছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব ও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদ করিম।
কোন সুপার স্টারদের আনা হবে সে নামগুলো অফিসিয়ালি এখনই বলতে চাননি ফেডারেশনের এই দুই শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা। তবে তাদের নোটবুকে আছে জার্মানির সাবেক টেনিস তারকা স্টেফি গ্রাফ, রাশিয়ার মারিয়া শারাপোভা এবং ভারতের সানিয়া মির্জার নাম। ‘মারিয়া শারাপোভাকে আনাটা অনেক কঠিন কাজ আমরা জানি। তবে ঢাকাস্থ রাশিয়ান দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করবো’-বলেছেন মো. মাসুদ করিম।
কয়েকদিন আগেই অস্ট্রেলিয়া ওপেন দেখে এসেছেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। ওই সময় কি কোনো সেলিব্রেটির বিষয়ে আলোচনা করেছেন আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে? ‘আসলে খেলা চলাকালীন সবাই ব্যস্ত থাকেন। বিস্তারিত আলোচনা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা কাদের আনতে চাই সে বিষয়ে একটা অফিসিয়াল প্রস্তাবনা পাঠাতে বলেছেন তারা। আমরা বসে ঠিক করবো কাকে কাকে আনা সম্ভব। সেভাবেই নামগুলো পাঠাবো তাদের কাছে। সব কিছুই নির্ভর করছে অর্থ আর যাকে চাইবো তার সিডিউলের ওপর’-বলেছেন মো. মাসুদ করিম। শেষ পর্যন্ত যেই হোক-ফেডারেশন এক বা একাধিক সাবেক সুপারস্টার এনেই লিগের উদ্বোধনী অনুষষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করতে চাইছে।
মোহামেডান-আবাহনীসহ যেসব ক্লাব আমন্ত্রিত দল হিসেবে লিগে অংশ নেবে তাদের তো টেনিসের চর্চাই নেই। তাহলে খেলবে কি করে? জবাবে শেখ মোহাম্মদ আসলাম বলেন, ‘যেসব ক্লাবকে আমরা কোচ দেবো এবং দল গঠনের জন্য খেলোয়াড় সংগ্রহ করে দেবো। কারণ, তারা টেনিসের সঙ্গে সেভাবে সম্পৃক্ত নেই। শুধু লিগের আকর্ষণ বাড়াতেই মোহামেডান-আবাহনীর মতো ক্লাবকে আমরা লিগে অন্তর্ভূক্ত করছি।’
বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার টেনিস লিগ শেষ করতে এক মাস লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ও ফেডারেশনের সদস্য খালেদ সালাউদ্দিন, ‘রমনা টেনিস কমপ্লেক্সে ৮ টি কোর্ট রয়েছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ টি করে ম্যাচ আয়োজন করা যাবে। সিঙ্গেল লিগ হবে। সবাই সবার সাথে একবার করে খেলবে। ঠিক ডেভিস কাপের আদলে।’
লিগের জন্য প্রতিটি ক্লাব ৫ জন করে খেলোয়াড় নিবন্ধন করতে পারবে। খেলা হবে দুটি একক এবং একটি দ্বৈত ইভেন্টে। কোনো ক্লাব চাইলে একজন বিদেশি খেলোয়াড়ও নিবন্ধন করাতে পারবে। কিছু ক্লাব ইতিমধ্যে খেলোয়াড়ের জন্য কলকাতায় যোগাযোগ শুরু করেছে বলেও জানা গেছে।
বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার টেনিস লিগকে যতটা সম্ভব জাঁকজমকপূর্ণ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ‘সভাপতির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, লিগটা জাঁকজমকপূর্ণভাবে করতে হবে। লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা নেয়ায় তিনি খুব খুশি’-বলেছেন শেখ মোহাম্মদ আসলাম।
বঙ্গবন্ধু প্রিমিয়ার টেনিস লিগে খেলতে যে ক্লাবগুলো সম্মতি জানিয়েছে তাদের উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-মোহামেডান, আবাহনী, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ওয়ারি ক্লাব, আজাদ স্পোর্টিং ক্লাব, গুলশান ইয়ুথ ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, আমেরিকান ক্লাব, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নওগাঁ ক্লাব, রাজশাহী ক্লাব, আজিমপুর ক্লাব, নারায়ণগঞ্জ ক্লাব ও অফিসার্স ক্লাব।