মায়ের সঙ্গে থাকতে চান এরিক, থানায় জিডি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
নিজ বাড়িতেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানানোর পাঁচ দিনের মধ্যে থানায় জিডি করেছেন এরশাদপুত্র শাহতা জারাব এরিক। গতকাল সোমবার গুলশান থানায় করা এই সাধারণ ডায়েরিতে (জিডি) এরিক তার বারিধারার বাড়িতে মা বিদিশাকে রাখতে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
বিদিশার সঙ্গে এসেই এরিক বিকালে এই জিডি করেন বলে জানিয়েছেন গুলশান থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, তিনি (এরিক) বলেছেন, তিনি অসুস্থ বিধায় তার মাকে নিয়ে থাকতে চান। এসময় তার মা বিদিশাও এসেছিলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদিশা বলেন, আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলব না, যা খুশি লিখেন।
এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ এ থাকা এরিকের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘জোর করেই’ উঠে পড়েন বিদিশা। ওই ভবনের পাঁচ তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন তরুণ এরিক। এরিকের দায়িত্ব নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশার লড়াই আদালতে গড়িয়েছিল।
২০০৫ সালে তাদের বিচ্ছেদের পর আদালতের মাধ্যমে এরিকের দায়িত্ব পান এরশাদ। বারিধারার বাড়িতে এরিককে নিয়ে থাকতেন তিনি। এরশাদ তার মৃত্যুর আগে এরিকের ভরণপোষণের জন্য ট্রাস্ট গঠন করে যান।
বিদিশার অভিযোগ, ছেলেকে দেখতে যেতে চাইলেও প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢুকতে তাকে বাধা দেওয়া হত। বাধা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এরশাদের ভাতিজা ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খালেদ আখতার বলেছেন, জীবদ্দশায় এরশাদ চাইতেন না যে বিদিশা এই বাড়িতে আসুক।
এদিকে রোববার বিকালে বিদিশা তার ফেসবুকে পেইজে এরিকের একটি ভিডিও আপলোড করেন। তাতে এরিককে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশে বলতে দেখা যায়- প্রিয় হোম মিনিস্ট্রি আঙ্কেল, আমি এরিক বলছি। আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে খেতে দেওয়া হত না।
আমার লিগ্যাল গার্জিয়ান আমার চাচা জি এম কাদের না, আমার মা। সেক্ষেত্রে ওনার (জি এম কাদের) তো কোনো রাইট নাই, আমাদের এরকম টর্চার করার। এরিককে নিয়ে বিদিশার অভিযোগের তীর এরশাদের ভাই ও জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দিকে। তবে তার অনুসারী জাতীয় পার্টি নেতারা সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
এরিককে দেখতে প্রেসিডেন্ট পার্কে গেছেন জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের (ইউএনএ) নেতারা। সোমবার বিকালে ইউএনএ জোটভুক্ত দল বিএনডিপির চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, মহাসচিব সাদ্দাম হোসেন, জোটে যোগ দিতে ‘ইচ্ছুক’ বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট শেখ শহিদুজ্জামান ওই বাড়িতে যান।
শেখ শহিদুজ্জামান বলেন, আমরা ৫ জন এসেছিলাম আজকে বিকালে। দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে আমরা এরিক এরশাদ ও বিদিশা ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। আমরা এরিককে সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিলাম। এরিক এরশাদ এখন ‘অনেকটাই সুস্থবোধ’ করছেন বলে জানান শহিদুজ্জামান।
তিনি বলেন, এরিক ও বিদিশা ম্যাডামের সাথে আমাদের খুব বেশি কথা হয়নি। বেশ রিজার্ভ ছিলেন এরিক। এরিক শুধু বলেছেন, তিনি মায়ের সঙ্গে থাকতে চান। বাইরের কেউ যেন তাকে ডিস্টার্ব না করেন।
এদিকে ইউএনএ নেতাদের প্রেসিডেন্ট পার্কে যাওয়ার খবর জাতীয় পার্টির শীর্ষনেতারা কেউ জানেন না বলে জানান দলটির চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায়। বিএনডিপি ও ন্যাশনাল কংগ্রেস অনুরোধ জানিয়েছিল সম্মিলিত জাতীয় জোটের অন্য শরিকদেরও। কিন্তু তাতে সায় আসেনি।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি বলেন, এরিককে নিয়ে জাতীয় পার্টিতে এখন রাজনীতি চলছে। আমরা গেলে পরে আবার জি এম কাদের সাহেব না ক্ষিপ্ত হন, সব দিক ভেবে আমরা যাইনি।
এরিককে দেখতে যাওয়ায় জোটের রাজনীতিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন শেখ শহিদুজ্জামান। আমরা জাতীয় পার্টির কোনো নেতার সঙ্গে আলোচনা করে আসিনি। আমার মনে হয় না, আমাদের দেখা করতে আসা নিয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে। জি এম কাদেরের সঙ্গে আমাদের গুড রিলেশন।