মার্কেন্টাইলের চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের জামিন বাতিল বিষয়ে হাইকোর্টের রুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঋণের টাকা আত্মসাতের মামলায় মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আকরাম হোসেন (হুমায়ুন) ও আরও পাঁচ কর্মকর্তাকে দেওয়া জামিন কেন বাতিল করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট। দুই সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
অন্য যে পাঁচজনের জামিন বাতিলের বিষয়ে রুল জারি করা হয়েছে তারা হলেন- ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল হক, নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আমান উলাহ, সাবেক সদস্য মো. মনসুরুজ্জামান, মো. সেলিম এবং তৌফিকুর রহমান চৌধুরী। এই ছয়জন ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করলে গত ১১ জুন পাঁচজনকে ও ১২ জুন একজনকে জামিন দেন বিচারক।
নিম্ন আদালতের আদালতের দেওয়া সে জামিন বাতিল চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা আবেদনে বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এ এস এম আব্দুল মোবিনের হাই কোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে দুদকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন একেএম ফজলুল হক। তিনি বলেন, মামলা হওয়ার অনেকদিন পর আসামিরা ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন চাইলে সেদিনই আদালত তাদের জামিন দিয়েছেন।
এছাড়া সরকারি জমি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়ে সে ঋণ তারা আত্মসাৎ করেছেন। ফলে দুদক তাদের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করেছে। আদালত তাদের জামিন বাতিল প্রশ্নে রুল জারি করেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, প্যাট্রিক ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফরহাদ হোসেন ২০০০ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান শাখায় সাড়ে ৮ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেন। ঋণের জামানত হিসেবে গুলশান থানার ভাটারা মৌজার ১২ কাঠারও বেশি জমি বন্ধক রাখার প্রস্তাব করেন। কিন্তু ওই জমি ছিল সরকারের অনুকূলে অধিগ্রহণ করা।
ওই আবেদন পাওয়ার পর ব্যাংক কর্মকর্তা তনুশ্রী মিত্র ও মোহাম্মদ মাহতাব উদ্দিন সরেজমিনে পরিদর্শন করে মূল্যায়ন করেন। কিন্তু তারা ওই জমি সরকারের অনুকূলে অধিগ্রহণের বিষয়টি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে গোপন রাখেন।
প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরদিনই ব্যাংক কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম ও নবী-উস-সেলিম ওই গ্রাহকের অনুকূলে ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ঋণ অনুমোদনের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করেন। সুপারিশপত্রে তারাও বন্ধক রাখার জন্য প্রস্তাবিত জমির অধিগ্রহণ করা বিষয়টি গোপন রাখেন।
পরে ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য মো. আনোয়ারুল হক, মো. মনসুরুজ্জামান, আকরাম হোসেন (হুমায়ুন), মো. আমান উলাহ, মো. সেলিম, এস এম সাকিল আখতার ও তৌফিক রহমান চৌধুরী সম্পত্তির মালিকানা পরীক্ষা না করেই ঋণ অনুমোদন করেন।
কিন্তু ওই ঋণের বিপরীতে সরকারি অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তিই বন্ধক রাখা হয়। ঋণগ্রহীতা ৮ কোটি টাকা কম্পোজিট ঋণসীমা ভোগ করেন। কিন্তু ঋণগ্রহীতা বিদেশি ক্রেতার চাহিদা ও সময়মত রপ্তানি কার্যক্রম চালাতে ব্যর্থ হওয়ায় রপ্তানি আয় থেকে এই দায় পরিশোধ হয়নি।
ফলে এ পর্যন্ত গ্রাহকের কাছে সুদসহ ব্যাংকের মোট পাওনা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৮৩ লাখ ৪১ হাজার ১২ টাকা। বন্ধকি সম্পত্তির মালিকানা সরকারের থাকায় এখনও ওই অর্থ আদায় হয়নি।
এজাহারে আরও বলা হয়, ‘আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অন্যায়ভাবে লাভবান হওয়ার লক্ষ্যে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা করেছেন। এর মাধ্যমে ভুয়া রেকর্ডপত্র তৈরি করে সরকারি সম্পত্তি বন্ধক দেখিয়ে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের প্রধান শাখা থেকে টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন’।
এই টাকা পরিশোধ না করায় ঋণ গ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ও ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা ব্যাংক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গত বছর ৫ ডিসেম্বর মামলা করে দুদক।