‘মার্কেট লিডারের’ বিরুদ্ধে বাজার কুক্ষিগত করার অভিযোগ রবির
করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে টেলিকম খাতের ‘মার্কেট লিডার’ তাদের বাজারভিত্তিক পদক্ষেপকে সিএসআরের মোড়কে উপস্থাপন করায় প্রতিযোগিতার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে আরেক অপারেটর রবি।
গ্রাহক সংখ্যার বিচারে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে থাকা রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলছেন, কোভিড-১৯ এ সৃষ্ট সংকটকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগিয়ে বাজার কুক্ষিগত করছে শীর্ষ কোম্পানি।
সোমবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে চলমান সংকটে রবি কোন দৃষ্টিভঙ্গিতে কী কী পদক্ষেপ নিচ্ছে তার বিস্তারিত তুলে ধরার পাশাপাশি এই অভিযোগ করেন মাহতাব উদ্দিন।
দেশের সবচেয়ে বড় অপারেটর গ্রামীণফোন শুক্রবার এক সংবাদ সম্মলনে ঘোষণা দেয়, এপ্রিল মাসে রিচার্জ করতে পারেননি বা যাদের ব্যালেন্স নেই বললেই চলে, এমন এক কোটি গ্রাহককে ১০ কোটি মিনিট ফ্রি টকটাইম দেবেন তারা।
এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সনদপ্রাপ্ত ২৫ হাজার করোনাভাইরাস চিকিৎসকদের জন্য ১ টাকার বিনিময়ে আগামী ৬ মাসের জন্য প্রতি মাসে ৩০ জিবি ডেটা দেওয়াসহ কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নানা উদ্যোগের ঘোষণা দেয় অপারেটরটি।
করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট পেশাজীবীদের মতো ‘সামর্থ্যবান গ্রাহকদের’ জন্য মাত্র ১ টাকায় ৩০ জিবি ডেটা দেওয়ার মতো অফার নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন দেয়ায় ‘বিস্ময়’ প্রকাশ করেন মাহতাব।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, “মার্কেট লিডার কোভিড-১৯ এর সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাজার কুক্ষিগত করছে। মার্কেট লিডারের দেওয়া ওই অফারটি মূল্য যুদ্ধের প্রকৃষ্ট উদাহারণ।”
মাহতাব বলেন, “নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি) যদি মার্কেট লিডারকে সুশৃঙ্খলভাবে চলার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তবে তারা কোভিড-১৯ সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে আরও ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবে।
“যদি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকার এটা মনে না করে যে দেশের স্বার্থে একটি অপারেটরই যথেষ্ট, তাহলে এখনই তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কারণ মার্কেট লিডার যদি এসএমপি বিধিমালা মেনে না চলে তবে আমরা আর ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব না।”
রবির এই অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন মো. হাসান ইমেইলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ভয়াবহ সংকটে সবাই মিলে দেশবাসীর পাশে দাঁড়ানো এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এবং এজন্য সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। এটা দুঃখজনক যে এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। তবে আমরা সাধুবাদ জানাই যে, অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং এগিয়ে আসছেন।”
আর অভিযোগের বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবকিছু আইন অনুযায়ী করা হচ্ছে। কেউ যদি অভিযোগ করে সেই ভিত্তিতে দেখা হবে আইন লংঘন হয়েছে কি না, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শীর্ষ কোম্পানির অফারের সাথে সামঞ্জস্য রাখার জন্য রবি গ্রাহকদের জন্যও বিভিন্ন অফার আনা হচ্ছে জানিয়ে মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, “যারা নিয়মিত রিচার্জ করতেন কিন্তু করোনাভাইরাস সংকটের কারণে করতে পারছেন না, তাদের জন্য বিনামূল্যে ১০ মিনিট টকটাইম ও ৫০ এমবি ডেটা দিচ্ছি।
“এছাড়া রবি বিক্রয় ও পরিবেশন কর্মীদের জন্য খাবার সরবরাহ, আর্থিক সহায়তা ও স্বাস্থ্য বীমাসহ সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।”
চলমান করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলায় সমাজের সবার পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে মাহতাব বলেন, “এ প্রেক্ষিতে রবির স্পষ্ট অবস্থান হচ্ছে, বাজারমুখী পদক্ষেপ আর কর্পোরেট দায়বদ্ধতা সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপকে এক করে ফেলার সুযোগ নেই।
“যদিও দুটি বিষয়ই করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, কিন্তু দুটি বিষয় দুই ধারায় কার্যকর বলে কোম্পানি একে এক করে দেখতে রাজি নয়। বাজার সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের সাথে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্তের বিষয়টি জড়িয়ে আছে। কিন্তু টেকসই পদক্ষেপগুলো শুধুই সমাজের দিকে তাকিয়ে নেওয়া হয়।”
মাহতাব জানান, এখন দৈনিক রাজস্ব চার কোটি টাকা কম হওয়ার পরও রবি নির্দিষ্ট প্যাকগুলোতে ডেটা প্রাইস ৬০ শতাংশের মতো কমিয়েছে, ভয়েসের ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব কমানো হয়েছে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বর্তমানে ব্যয় ও মূল্যের অনুপাতে বাজারে ‘সেরা অফার মূল্য’ দিচ্ছে রবি।
মাহতাব জানান, বাজার ও টেকসই পদক্ষেপ মিলিয়ে করোনাভাইরাস মেকাবিলায় রবির ব্যয় ইতোমধ্যে ১৭০ কোটি টাকা (৯০ কোটি টাকা পুরোপুরি সিএসআর ও টেকসই পদেক্ষেপে এবং বাকি ৮০ কোটি টাকা বিপণন সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপে) ছাড়িয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে মাহতাব রবি’র সিএসআর ও টেকসই পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সেনা কল্যাণ সংস্থার সহযোগিতায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০ হাজার পরিবারের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের জনসমাগম স্থানগুলোতে জীবাণুমুক্তকরণ বুথ স্থাপন করবে রবি।
এছাড়া রবির স্থাপিত ও পরিচালিত সরকারের ৩৩৩ হটলাইনটি কোভিড-১৯ সংকটে কেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি। বর্তমান সংকটে রবি-টেন মিনিট স্কুলের অবদান সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেন।
এ সময় রবি’র চিফ কপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলমসহ কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।