মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জরিপের ফল কি ‘ভুল’ হবে এবারও?
আগামী চার বছর হোয়াইট হাউসে কে থাকবেন তা নির্ধারিত হবে ৩ নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে। এ লড়াইয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হচ্ছেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ জো বাইডেন। ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ভোটাররা শেষপর্যন্ত কার দিকে ঝুঁকবেন তা বুঝতে ততটাই মরিয়া হয়ে উঠছে জরিপ প্রতিষ্ঠানগুলো।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জরিপের ফলাফল কতটা বিশ্বাসযোগ্য তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকেরই। অন্তত গত নির্বাচনে জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে থাকা ট্রাম্প শেষপর্যনত প্রেসিডেন্ট হওয়ায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আরও শক্তভাবে।
এবারের জরিপের কী অবস্থা?
এবারের নির্বাচনপূর্ব জরিপের ফলাফলে শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট নেতা জো বাইডেন। এখনও সেই ধারা বজায় রেখেছেন তিনি। মার্কিন ভোটারদের মধ্যে বাইডেনের সমর্থন প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে মাঝে ১০ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়লেও গত কয়েকদিনে ব্যবধান অনেকটাই কমিয়ে এনেছেন ট্রাম্প।
জনপ্রিয়তার দৌঁড়ে বাইডেন এখনও এগিয়ে থাকলেও পথ বাকি বহুদূর। ভোটে কার পাল্লা ভারি হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে শেষমুহূর্ত পর্যন্ত। ২০১৬ সালের নির্বাচনেই জরিপের ফলাফল উল্টে দিয়ে হিলারি ক্লিনটনকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নির্বাচনে জয়-পরাজয় যার হাতে
২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটন হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে মোট কত ভোট পেলেন তার চেয়ে কোথা থেকে ভোট পাচ্ছেন সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গতবারের নির্বাচনে ট্রাম্পের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েও লড়াইয়ে হেরেছেন তিনি।
এর প্রধান কারণ দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেক্টোরাল কলেজ সিস্টেমের ব্যবহার। এ পদ্ধতিতে প্রত্যেকটি অঙ্গরাজ্যে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সংখ্যক ভোট নির্ধারণ করা হয়। লড়াই হয় মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের জন্য, ফলে জিততে দরকার হয় মাত্র ২৭০টি।
ভোটের ময়দানে এগিয়ে কে?
এই মুহূর্তে ভোটের ময়দানে জো বাইডেনকেই এগিয়ে থাকতে দেখা যাাচ্ছে। তিনি মিশিগান, পেনসিলভানিয়া ও উইসকনসিনে বড় ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন। এই তিনটি অঙ্গরাজ্যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে এক শতাংশেরও কম ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন ট্রাম্প।
আবার আইওয়া, ওহিও, টেক্সাসে গতবার ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোটে জিতলেও এসব এলাকায় এবার তার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন বাইডেন।
জরিপ কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
২০১৬ সালের জরিপে পিছিয়ে থেকেও ট্রাম্প নির্বাচনে জিতেছিলেন বলে এসব জরিপের যথার্থাতা হয়তো অনেকেই উড়িয়ে দেবেন। তবে ঘটনাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়।
বেশিরভাগ জরিপ হিলারি ক্লিনটনকে এগিয়ে রেখেছিল মানেই তারা ভুল করেছে এমনটা নয়। তিনি কিন্তু ঠিকই ট্রাম্পের চেয়ে ৩০ লাখ ভোট বেশি পেয়েছিলেন।
অবশ্য জরিপে কিছু সমস্যাও ছিল। বেশ কিছু এলাকায় নির্বাচনী লড়াইয়ে ট্রাম্প বিশেষ সুবিধা পাবেন সেটি ভোটের আগমুহূর্ত পর্যন্ত বুঝতে পারেনি জরিপকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে এবার সেইসব ভুল অনেকটাই সংশোধন করেছে তারা।
তারপরও মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত কে জিতবেন তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে অর্থনীতি এবং ভোটে মানুষের মনমানসিকতা কেমন থাকবে তার ওপর বড় প্রভাব ফেলেছে করোনাভাইরাস মহামারি। সেক্ষেত্রে, জরিপের ফলাফল নিয়েই কিছুটা সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।