মার্কিন নাগরিক হত্যা: পুলিশের এসিসহ ৮ জনের নামে মামলা
রাজধানীতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক সাফায়েত মাহবুব ফারাইজিকে হত্যার অভিযোগে বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তয়াছের জাহানসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে।
বুধবার (০৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রকিবের আদালতে ফারাইজির মা শামিমুন নাহার এ আবেদন করেন।
আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে মামলার আবেদনটি আদেশের জন্য রেখেছেন।
মামলায় আরও যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর, ভিকটিমের বান্ধবী সুজানা তাবাসসুম সালাম, আফতাব, শাখাওয়াত, আসওয়াদ, বাড়ির মালিক কামরুল হক ও কেয়ারটেকার রিপন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী সারোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, বাদীর ছেলে ফারাইজি গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে আসেন। দেশে আসার পর মায়ের সঙ্গে সুজানা, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদকে পরিচয় করিয়ে দেন তিনি। মাঝে মধ্যে সুজানা ফারাইজির সঙ্গে দেখা করতে বাসায় যেতেন। তারা বাসায় গিয়ে নেশা করতেন। বিষয়টি জানতে পেরে শামিমুন নাহার সুজানাকে ফারাইজির সঙ্গে দেখা করতে ও বাসায় যেতে নিষেধ করেন।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা বাসায় এসে মা-ছেলেকে গালিগালাজ ও আঘাত করেন। পরে ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ গিয়ে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং মীমাংসা করে দেয়।
এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি বাদী শামিমুন নাহার এবং তার ছেলে গুলশানে যান। সেখান থেকে ফেরার পথে আসামিরা তাদের ওপর আক্রমণ করেন। এ ঘটনায় তারা আহত হন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। ওইদিন রাত সাড়ে ৯ টার দিকে এসি তয়াছের জাহান এবং এসআই মশিউর ভিকটিমের বাসায় সুজানাকে নিয়ে যান। তারা সুজানার সঙ্গে ফারাইজিকে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রাখতে বলেন। অন্যথায় ফারাইজি দেশে থাকতে পারবে না বলে হুমকি দেন।
জানা যায়, ভিকটিম গত ২৫ ডিসেম্বর বড় দিনের অনুষ্ঠান পালন করতে বাসা থেকে বের হন। রাত পৌনে ১২টায় বাসায় ফিরেন। এ সময় তার সঙ্গে সুজানা, আফতাব, শাখাওয়াত ও আসওয়াদ ছিলেন। এতে বাদী রাগান্বিত হয়ে তাদের বাসা থেকে বের হতে বলেন। তখন সুজানা ভিকটিমকে বলে তাদের বাসায় পৌঁছে দিতে। ভিকটিম তার অনুরোধে আসামিদের সঙ্গে যায়। পরবর্তীতে ফারাইজি আর বাসায় ফেরেননি।
ফারাইজির কোনো হদিস না পেয়ে বাদী ভাটারা থানায় যান। এসি তয়াছের জাহনের কাছে সুজানার ঠিকানা জানতে চান। তখন এসি জানান, আসামির বিষয় ও ঠিকানা তিনি জানেন না। এরপর ২৭ ডিসেম্বর বাদীর কাছে ভাটারা থানা থেকে ফোন আসে, তার ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি ময়নাতদন্ত শেষে বাদীকে তার ছেলের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
এরপর গত ২ জানুয়ারি বাদী যেখান থেকে ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ওই বাসায় যান। কিন্তু বাড়ির মালিক কামরুল হক (বাড়ির মালিক) ও কেয়ারটেকার রিপন তাকে বাসায় ঢুকতে না দিয়ে হত্যার হুমকি দেন। পরদিন ৩ জানুয়ারি বাদী ভাটারা থানায় মামলা করতে গেলে এসি তয়াছের জাহান ও এসআই মশিউর মামলা না নেওয়ার হুমকি দেন।
বাদীর অভিযোগ, আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তার ছেলেকে হত্যা করেছেন। পরিকল্পিতভাবে হত্যার আলামত নষ্ট করে এবং তাকে হুমকি দিয়ে আসছেন। ৪৫ দিনেও থানা মামলা না নেওয়ায় মার্কিন দূতাবাসের পরামর্শে আদালতে মামলা করেন বলে জানান বাদী।