মার্কিন আদালতে দোষী সাব্যস্ত ‘মাদকসম্রাট’ এল চাপোর স্ত্রী এমা
মেক্সিকান মাদকসম্রাট জোয়াকিন এল চাপো গুজম্যানের স্ত্রী এমা করোনেল এইসপুরোকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। স্বামীর মাদক সাম্রাজ্য পরিচালনায় সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সিএনএনের খবর অনুসারে, ৩১ বছর বয়সী এমাকে গত বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের ফেডারেল আদালতে হাজির করা হয়। এসময় বিচারপতি জানতে চান, তিনি নিজেকে দোষী মনে করেন কি না? জবাবে স্প্যানিশ ভাষায় ‘হ্যাঁ’ বলেন সাবেক এ ‘বিউটি কুইন’।
গত ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনের ডুলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয় এমা করোনেলকে। এরপর থেকেই বন্দি রয়েছেন তিনি। তার আইনজীবী জেফরি লিচম্যানের আশা, এমা শিগগিরই দুই কন্যার কাছে ফিরে যেতে পারবেন।
এমার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে হেরোইন, কোকেন, গাঁজা, মেথামফেটামাইনের মতো মাদক পাচার এবং মার্কিন রাজস্ব বিভাগ ঘোষিত মাদকপাচারকারী স্বামীর অর্থ লেনদেনে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর তার সাজার মেয়াদ ঘোষণা করা হবে।
মার্কিন বিচার বিভাগের মামলা-মোকদ্দমা শাখার উপ-প্রধান অ্যান্টনি নারদোজি আদালতে জানিয়েছেন, এমা করোনেল কুখ্যাত ‘সিনালোয়া কার্টেল’-এর সঙ্গে ২০১১ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত জড়িত থাকার প্রমাণ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য রয়েছে প্রসিকিউটরদের কাছে। এমা অনেক সময় তার স্বামী এবং কার্টেলের সদস্যদের মধ্যে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করতেন।
৬৩ বছর বয়সী গুজম্যান বর্তমানে মাদক ও অর্থ পাচারের দায়ে নিউইয়র্কে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। জব্দ করা হয়েছে তার ১২শ’ কোটি ডলারের বিপুল সম্পত্তি। মাদকসম্রাট হওয়ার পথে মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকেই ধর্ষণ এবং প্রতিযোগীদের ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা শুরু করেন তিনি।
২০০৭ সালে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় এমার দিকে নজর পড়ে তার তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বয়সী গুজম্যানের। পরে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তাদের। সংসারে দু’টি যমজ সন্তান রয়েছে এ দম্পতির।
সুন্দরী এমা শুধু গুজম্যানের সংসারেই নয়, ব্যবসাতেও গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠেন। তিনি ২০১৫ সালে মেক্সিকোর কারাগার থেকে স্বামীকে পালাতে সহায়তা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, মেক্সিকোর সর্বাধিক সুরক্ষিত কারাগার আলতিপ্লানো থেকে পালিয়েছিলেন গুজম্যান। তার ছেলে কারাগারের পাশে একটি জায়গা কিনেছিল এবং কারাগার থেকে চুরি করা একটি জিপিএস ঘড়ির মাধ্যমে টানেল খননকারীরা গুজম্যানের প্রকৃত অবস্থান নিশ্চিত করে। বিশেষভাবে তৈরি একটি মোটরসাইকেলে করে টানেল দিয়ে কারাগার থেকে পালিয়ে যান গুজম্যান।
আর এই ঘটনায় বড় ভূমিকা ছিল স্ত্রী এমার। তিনিই কার্টেলের সদস্যদের কাছে গুজম্যানের বার্তা পৌঁছাতেন এবং পরিস্থিতিবিশেষ প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন।
২০১৮ সালে নিউইয়র্কে স্বামীর বিচারের শুনানিতে প্রতিটা দিনই আদালতে হাজির হয়েছেন এমা করোনেল। চোখে সানগ্লাস আর মুখে চুয়িংগাম থাকা এ রমণী সহজেই দৃষ্টি কাড়তেন সবার। টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও স্বাচ্ছন্দ্য অংশগ্রহণ ছিল তার।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেয়া এমা বড় হয়েছেন মেক্সিকোর ক্যানেলাস গ্রামে। সেখানেই গুজম্যানের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় তার। এমার বাবা ইনেস করোনেল ব্যারেরাস সিনালোয়া কার্টেলের মধ্যম সারির সদস্য ছিলেন, তার ভাইও এদের সঙ্গে কাজ করতেন বলে জানা যায়।