মারিউপোলের কারখানা থেকে বেসামরিকদের সরানোর পর গোলাবর্ষণ শুরু
মারিউপোরে আজভস্তাইল লৌহ ও ইস্পাত কারখানা থেকে বেসামরিকদের নিয়ে শেষ বাসটি সীমানা ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গেই রাশিয়ার বাহিনীগুলো ফের গোলাবর্ষণ শুরু করেছে বলে নগরীটির একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সোমবার দাতব্য সংস্থাগুলো ইউক্রেইনের বিধ্বস্ত নগরীটি থেকে আরও বেসামরিকদের সরিয়ে নিতে কাজ শুরু করলেও আজভস্তাইল কারখানায় আরও কয়েকশ বেসামরিক আটকা পড়ে আছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
মারিউপোল থেকে রওনা হওয়া বেসামরিকদের প্রথম দলটি এদিন ২৩০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপোরিজজিয়া শহরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। কিন্তু ইস্পাত কারখানাটিতে যারা আটকা পড়ে আছেন তাদের পানি, খাবার ও ওষুধ ফুরিয়ে এসেছে বলে জানা গেছে।
সোভিয়েত আমলের বিশাল কারখানাটির ভূগর্ভস্থ বাংকার ও টানেলের গোলকধাঁধায় ইউক্রেইনের প্রায় দুই হাজার সেনা অবস্থান নিয়ে প্রতিরোধ চালিয়ে যাচ্ছে, সুরক্ষিত এসব বাংকার কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা রাশিয়ার গোলা ও বোমাবর্ষণ থেকে তাদের রক্ষা করে চলছে।“(সেখানকার) পরিস্থিতি সত্যিকার মানবিক বিপর্যয়ের নিদর্শন হয়ে দাঁড়িয়েছে,” বলেছেন ইউক্রেইনের উপপ্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেশ্চুক।
ইউক্রেইনের আঞ্চলিক একজন গভর্নর জানিয়েছেন, সোমবার ইউক্রেইনের পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতেও রাশিয়া ব্যাপক বোমবর্ষণ করছে।
রাশিয়ার বাহিনীগুলো ইউক্রেইনের রাজধানী কিইভ দখলে ব্যর্থ হওয়ার পর এখন দেশটির পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এরইমধ্যে ইউক্রেইনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনের পাশাপাশি আজভ সাগরের তীরবর্তী বন্দরনগরী মারিউপোল প্রায় পুরোপুরি দখল করে নিয়েছে তারা। এর মাধ্যমে পশ্চিমে ও পূর্বে রাশিয়ার অধিকৃত অঞ্চলগুলোর মধ্যে সংযোগ ঘটিয়েছে তারা।
কিন্তু মারিউপোলের ইস্পাত কারখানার নিয়ন্ত্রণ এখনও নিতে পারেনি তারা, গত দুই দিনে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সেখান থেকে কিছু বেসামরিককে সরিয়ে নেওয়া হলেও কয়েক হাজার সেনা এখনও রয়ে গেছে।প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রোববার মারিউপোলের আজভস্তাইল ইস্পাত কারখানার থেকে প্রায় ১০০ জন বেসামরিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তারা ইউক্রেইনের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহর জাপোরিজজিয়ার পথে রয়েছেন। সোমবার সকালে তারা শহরটিতে পৌঁছবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এক টুইটে তিনি বলেছেন, “প্রায় ১০০ জনের প্রথম দলটি ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রিত এলাকার দিকে এগোতে শুরু করেছে। আগামীকাল (সোমবার) জাপোরিজজিয়ায় তাদের সঙ্গে আমরা সাক্ষাৎ করবো।”
রাত্রিকালীন এক ভিডিও ভাষণে জেলেনস্কি বলেছেন, “ওই অঞ্চলে প্রথমবারের মতো দুই দিনের অস্ত্রবিরতি পালন করেছি আমরা। এ সময়ে নারী ও শিশুসহ শতাধিক বেসামরিককে বের করে নিয়ে আসতে পেরেছি।”
এ পরিস্থিতি বজায় থেকে আরও লোককে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেবে, তিনি এমন আশা করছেন বলে জানিয়েছিলেন।
রয়টার্সের এক আলোকচিত্র সাংবাদিক জানিয়েছেন, মারিউপোল থেকে বের হয়ে আসা ৫০ জনেরও বেশি বেসামরিকের একটি দল শহরটি থেকে ৩০ কিলোমিটার পূর্বে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রিত বেজিমান্নে গ্রামের অস্থায়ী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। তারা বাসে করে জাতিসংঘ ও রাশিয়ার সামরিক বহরের সঙ্গে গ্রামটিতে এসে হাজির হন বলে জানিয়েছেন তিনি।ইস্পাত কারখানাটির ভেতরের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, রাশিয়ার কথিত নব্য নাৎসি গোষ্ঠী আজভ রেজিমেন্টের সদস্যরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে বেসামরিকদের বাসে তুলে দিতে সহায়তা করছেন।
কিন্তু এখনও কয়েশ বেসামরিক সেখানে সেনাদের সঙ্গে আটকা পড়ে আছেন বলে জানা গেছে। কারখানাটি থেকে ছোট একটি শিশুকে নিয়ে বের হয়ে আসা এক বৃদ্ধা জানিয়েছেন, সেখানে যারা বেঁচে আছেন তাদের খাবার ফুরিয়ে আসছে।
“শিশুরা সবসময়ই খেতে চায়। আপনি জানেন, বড়রা অপেক্ষ করতে পারে,” বলেন তিনি।
মারিউপোলের মেয়রের একজন সহযোগী পেত্রো আন্দ্রিয়শ্চেনকো ইউক্রেইনের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে বলেন, “গতকাল বেসামরিকদের নিয়ে বাসগুলো আজভস্তাইল ছাড়ার পরপরই নতুন করে গোলাবর্ষণ শুরু হয়ে যায়।”
রেড ক্রস জানিয়েছে, জাতিসংঘ, ইউক্রেইনীয় ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারাও মারিউপোল থেকে বেসামরিকদের সরিয়ে নেওয়ার কাজে অংশ নিচ্ছে।