মামুনুলকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট, হিন্দুদের গ্রাম তছনছ করল অনুসারীরা
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হেফাজত নেতার কয়েক হাজার অনুসারী একটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে।
বুধবার (১৭ মার্চ) সকালে এ ঘটনা ঘটে।
আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ মার্চ দিরাইয়ে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আসেন মামনুল হকসহ কেন্দ্রীয় হেফাজত নেতৃবৃন্দ। তিনি সমাবেশে নানা কথাবার্তা বলে যান। এ ঘটনায় গতকাল ক্ষুব্ধ হয়ে শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াগাও গ্রামের ঝুমন দাস আপন নামের এক যুবক ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যবিরোধী নেতা মামুনুলের সমালোচনা করেন তিনি। এ ঘটনাকে ধর্মীয় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগ এনে ওই এলাকার হেফাজত নেতার অনুসারীরা রাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাতেই ঝুমন দাস আপন নামের ওই যুবককে আটক করে।
এদিকে, আজ বুধবার সকালে কাশিপুর, নাচনী, চন্ডিপুরসহ কয়েকটি মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামের হেফাজত নেতা মামুনুল হকের কয়েক হাজার অনুসারী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে নোয়াগাও গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায়। হাজারো মানুষের আক্রমণে গ্রাম ছেড়ে পলায়ন করেন হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এই সুযোগে হেফাজত নেতার অনুসারীরা গ্রামে প্রবেশ করে তছনছ করে। লুটপাট করে বিভিন্ন বাড়িতে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এদিকে হামলার খবর জানালেও পুলিশ দেরিতে ঘটনাস্থলে গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গ্রামের লোকজন। তারা এ ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। অন্যদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের দিনে নিরীহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের গ্রামে সংঘবদ্ধ হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সুধীজন। তারা এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
গ্রামের সজল চন্দ্র দাস বলেন, আমার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। ঘরের সব কিছু লুটপাট করা হয়েছে। আমরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে এসেছি প্রাণ বাঁচাতে।
দিরাই শাল্লার কৃষক আন্দোলনের নেতা অমরচান দাস বলেন, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আজ সকালে হিন্দু সম্প্রদায়ের গ্রাম নোয়াগাওয়ে কয়েক হাজার সশস্ত্র লোক নিয়ে হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে। প্রাণে বাঁচতে গ্রামবাসী পালিয়ে গেছে। তিনি বলেন, অসাম্প্রদায়িক নেতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে এমন ঘটনায় আমরা হতবাক।
শাল্লা থানার ওসি নাজমুল হক গ্রামে হামলার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসেছি। আমরা উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করছি। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।