মানিক সাহা খুনে জড়িতদের অনেকে এখন রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত : বুলবুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
খুলনার সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত ও বিচারের দাবি জানিয়ে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেছেন, ওই হত্যাকাণ্ডে নেপথ্যে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত।
২০০৪ সালের এই হত্যাকাণ্ডের মামলায় ২০১৬ সালে খুলনার একটি আদালতের রায়ে নয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে মানিক সাহা হত্যার ‘মূল নায়করা’ বিচারের বাইরে রয়ে গেছে অভিযোগ করে মামলার পুনঃতদন্ত ও বিচার চাইছেন তার স্বজন-সহকর্মীরা। গতকাল মঙ্গলবার মানিক সাহার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনেও এই দাবি জানানো হয়।
‘মানিক সাহা হত্যার বিচারপ্রত্যাশী সংক্ষুব্ধ সাংবাদিক সমাজ’ ব্যানারে কর্মসূচিতে সাংবাদিক বুলবুল ছাড়াও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং অন্যান্য সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতারা বক্তব্য দেন।
সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, উন্নয়নের অনেক সূচক আমরা দেখতে পাচ্ছি। কিন্ত যে দেশে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিক হত্যা হলে বিচার হয় না, আমার সেই দেশের ভাবমর্তি কোথাও না কোথাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সেই কারণে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশকে বলা হয়, গণমাধ্যমের আংশিক স্বাধীন দেশ। যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা খণ্ডিত হয়, এখানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিক নিহত হলে তার বিচার হয় না।
মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পর তার পরিবারের পাশে ছুটে গিয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। দেড় দশক আগের ওই ঘটনা স্মরণ করে মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি করেছি। তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি হয় তাহলে সাংবাদিকদের বিচারে বাধা কোথায়? আমরাও তাই মনে করি।
তিনি বলেন, মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যে শক্তি আছে তাদের চেহারা আমরা জানি, তাদের অনেকের নাম আমরা জানি। তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আজকে প্রতিষ্ঠিত। কাজেই সাংবাদিক মানিক সাহাসহ সকল সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। মানিক সাহাসহ অন্যান্য সাংবাদিকদের হত্যাকাণ্ডের বিচার যদি না হয় তাহলে এই সরকারের দেওয়া প্রতিশ্র“তি অগ্রহণযোগ্য হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মানিক সাহাকে নিয়ে সিপিবি সভাপতি সেলিম বলেন, সমাজের দানবীয় শক্তির বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন বলিষ্ঠ প্রতিরোধ। মানব ও দানবের যে চিরদিনের সংগ্রাম, মাথা উঁচু করে মানবের স্বার্থকেই তুলে ধরেছিলেন তিনি। এই কারণেই মানিক সাহা ছিলেন টার্গেট, কাদের টার্গেট? যারা সমাজের ওপরে, দেশের ওপরে শোষণ, অত্যাচার ও বর্বরতা চালিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য চেষ্টা করেন। সম্ভবত সেই কারণে এখন পর্যন্ত মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন করা হয়নি।
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শরীফুজ্জামান শরীফ, অ্যাডভোকেট হাসান তারেক চৌধুরী, সাংবাদিক রাহুল রাহা, মানিক লাল ঘোষ, শেখ জামাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।
একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানিক ছিলেন দৈনিক সংবাদ ও বিবিসির প্রতিনিধি। এক সময় খুলনা প্রেস ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি। ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি খুলনা প্রেস ক্লাবের কাছে বোমা হামলা চালিয়ে মানিক সাহাকে হত্যা করা হয়। খুলনার বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ রব হাওলাদার ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর আলোচিত এ মামলায় নয়জনকে যাবজ্জীবন সাজার রায় ঘোষণা করেন।