মানিকগঞ্জে তরুণীকে ধর্ষণের মামলায় দুই পুলিশ রিমান্ডে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
মানিকগঞ্জে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দুই পুলিশকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় দিনের রিমান্ডে দিয়েছে আদালত। বাদীপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বাদশা জানান, মানিকগঞ্জের বিচারিক হাকিম গোলাম সারোয়ার শুনানি শেষে মঙ্গলবার দুপুরে এই আদেশ দেন। পুলিশ ১০ দিনের আবেদন করলেও বিচারক ছয় দিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। দুই আসামি হলেন জেলার সাটুরিয়া থানার এসআই সেকেন্দার হোসেন এবং এএসআই মাজহারুল ইসলাম।
সাটুরিয়া থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, রোববার সকাল ৯টার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। এর আগে সোমবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার এক তরুণী। তিনি বাবার সঙ্গে ঢাকার অদূরে আশুলিয়া এলাকায় থাকেন।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এসআই সেকেন্দার হোসেনের সঙ্গে আশুলিয়ার এক নারীর পরিচয় হয়। ওই নারীর প্রতিবেশী এই তরুণী।
এই পরিচয়ের সূত্র ধরে পাঁচ-ছয় বছর আগে জমি ব্যবসার জন্য ওই নারী এএসআই সেকেন্দারকে এক লাখ টাকা দেন। পরে জমি বিক্রি করে তার অংশের লভ্যাংশসহ তিনি সেকেন্দারের কাছে তিন লাখ টাকা পাওনা হন। দীর্ঘদিনেও তার সব টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এ কারণে ওই টাকার জন্য তিনি মাঝেমধ্যে সাটুরিয়া থানায় সেকেন্দারের কাছে যেতেন বলে মামলায় বলা হয়।
তরুণী বলেন, গত বুধবার বিকালে তিনি পরিচিত ওই নারীর সঙ্গে সাটুরিয়া থানায় যান। থানায় যাওয়ার পর সেকেন্দার তাদের থানার পাশে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোয় নিয়ে যান। সেখানে একটি কক্ষে বসে পাওনা টাকার বিষয়ে কথাবর্তা বলার সময় এএসআই মাজহারুল সেখানে উপস্থিত হন। এরপর ওই নারীকে অন্য কক্ষে নিয়ে আটকে রাখা হয়।
এর পর তাকে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে গিয়ে ওই কর্মকর্তারা ইয়াবা সেবন করেন। এ সময় তাকেও ইয়াবা সেবনে বাধ্য করা হয়। ইয়াবা সেবনের পর তিনি অসুস্থবোধ করেন। এরপর থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ওই কক্ষে আটকে রেখে ওই দুই কর্মকর্তা তাকে কয়েক দফায় ধর্ষণ করেন।
এসপি রিফাত রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শনিবার রাতে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে দুই পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়। এরপর রোববার ওই তরুণী তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এসপি বলেন, লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হাফিজুর রহমান এবং জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হামিদুর রহমান সিদ্দিকী।
হাফিজুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত করা হয়। তদন্তে ওই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এ দিকে সোমবার রাতেই ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, তিনিসহ চার সদস্যবিশিষ্ট একটি চিকিৎসক দল ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করেন। আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।