মানসিক চাপ কমাতে সৃজনশীল কাজ
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রশিক্ষক সারাহ পেস রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “যখন আমরা শরীরকে নাচ, ছবি আঁকা, রং করা ইত্যাদি কার্যক্রমের মধ্যে ব্যস্ত রাখি তখন তা মস্তিষ্ককে আগের থেকে কম চাপ অনুভব করায়।”
“শারীরিক কাজের মাধ্যমে মনকে ব্যস্ত রাখা ডোপামিন বাড়ায় এবং ধ্যানের মতো কাজ করে যা নিঃশ্বাস ধীর করে অর্থাৎ চাপ হ্রাস পায়।”
বিভেইভিরল সায়েন্স’ সাময়িকীতে প্রকাশিত জার্মানির ‘অ্যালানাস ইউনিভার্সিটি অফ ফাইন আর্টস অ্যান্ড সোশাল সায়েন্স’য়ের করা ২০১৮ সালের গবেষণায় দেখা গেছে যে ‘ক্রিয়েটিভ আর্টস থেরাপি’ (শিল্প, সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক) মানসিক চাপ প্রতিরোধ করে এবং চাপ ব্যবস্থাপনা উন্নত করে।”
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট এবং ‘নার্ভাস এনার্জি: হার্নেস দি পাওয়ার অফ ইওর অ্যাংজাইটি’ বইয়ের লেখক ক্লোয়ি কারমাইকেল বলেন, “এই সৃজনশীল কাজগুলোর দিকে প্রতিদিনের যে কোনো সময় মনোনিবেশ করা সাময়িক অবকাশ দেয় ও মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে৷”
শখগুলোকে মানসিক চাপ কমানোর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তির। এগুলো খুব বেশি ব্যয়বহুলও নয়।
ম্যাসাচুসেটস’য়ের ‘ওয়েলকোচ কর্পোরেশন’য়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ‘অর্গানাইজ ইমোশন্স, অপ্টিমাইজ ইওর লাইফ’ বইয়ের সহলেখক মার্গারেট মুর বলেন, “সৃজনশীল ক্রিয়াকলাপগুলো তাদের সর্বোত্তম প্রবাহের মাধ্যমে ব্যস্ততার অনুভূতি দেয় এবং সচেতন নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।”
অন্যভাবে বলা যায়, এসব কাজ মনকে এতটাই ব্যস্ত করে তোলে যে, তা চাপ কিছুক্ষণের জন্য দূরে সরিয়ে রাখে এবং ভালো অনুভূতি দিতে সহায়তা করে।
নৃত্য:
নাচের মাধ্যমে শরীরচর্চাও হয়। যা মানসিক চাপ কমাতে পারে বলে গবেষণায় সমর্থন করা হয়।
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি’র গবেষণা অনুযায়ী, নাচ ও অন্যান্য শরীরচর্চার মতো মানসিক চাপ কমাতে সক্ষম। এটা এন্ডোরফিন নামক সুখী হরমোন নিঃসরণ করে যা দ্রুত শরীর ও মনকে ভালো রাখে
নাচের অনেক ধরন রয়েছে যা ভিডিও দেখে শেখা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, নাচের ধরন কোনো বিষয় নয়। আসল বিষয় হল ভালো একটা মিউজিক এবং অনানুষ্ঠানিক নাচার জায়গা।
ছবি আঁকা
ছবি আঁকা, স্কেচ, রং করা ইত্যাদি শখগুলো উদ্বেগের পরিবর্তে সৃজনশীলতার দিকে ধাবিত করে। হার্ভার্ডের গবেষণার উপসংহারে দেখা যায়, ছবি আঁকা চাপ কমাতে সক্ষম।
মানসিক চাপ কমাতে নিজেকে শিল্পি হতে হবে বিষয়টা তেমন না। ইন্টারনেটে দেখে অথবা নিজের মতো করে কিছুটা সময় ছবি বা রং তুলির সঙ্গে কাটালে মানসিক চাপ হ্রাস পায়।
লেখালেখি
জার্নাল, ছোট গল্প বা চিঠি লেখা মানসিক চাপ কমাতে সহায়তা করে। হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, মনেরভাব বা আবেগ লিখে প্রকাশ করা মানসিক চাপ কমায় এবং তা সহজ ও সাধারণ করে তুলতে পারে।
দশ মিনিট সময় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করলে মনের চাপ অনেকটাই হালকা হয়ে আসে।
বাদ্যযন্ত্র বাজানো
পছন্দের সুর যেমন মনকে আনন্দ দেয় তেমনি বাদ্যযন্ত্র বাজানোও মনের অস্থিরতা দূর করে।
‘ফেডারেল প্র্যাকটিশনার’ সাময়িকীতে ভার্জিনিয়ার পারফর্মিং আর্ট ইন্সটিটিউট’য়ের ছাত্র ড. ডেবরা শিপামের করা গবেষণায় দেখা গেছে, একটি যন্ত্র বাজাতে শেখা মানসিক মুক্তি দেয়। এমন প্রমাণ রয়েছে যে যন্ত্র বাজানো মস্তিষ্কের পরিবর্তনগুলোকে প্রভাবিত করে যা জ্ঞানীয় কার্যকারিতাকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং মানসিক চাপ কমায়।”
বাদ্যযন্ত্র বাজানো শেখা খুব একটা কঠিন কাজ নয়। বর্তমানে নানান রকমের ভিডিও, অ্যাপ বা অন্য কারও সাহায্যে সহজেই তা আয়ত্ব করে নেওয়া যায়।
বুনন
বুনন কাজ করা এক ধরনের ধ্যানমগ্ন কাজ।
বৃটিশ জার্নাল অব অকুপেইশনাল থেরাপি’তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত বুনন কাজ করা আত্মিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
বুননের গতি মনকে শান্ত করে এবং সুখী অনুভব করায়। টিউটোরিয়াল দেখে বুনন শেখা, বা কয়েকজন মিলে এক সঙ্গে বুনন কাজ করা মানসিক চাপ কমাতে ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
ছবি তোলা
চাপ দূর করতে ‘পয়েন্ট’, ‘জুম’ এবং ‘ক্লিক’ করা অর্থাৎ ছবি তোলার এই ধাপগুলো ইতিইবাচক ভূমিকা রাখে।
অপেশাদার ফটোগ্রাফিকে শখ করার জন্য দামী ক্যামেরার প্রয়োজন নেই। ফোন ব্যবহার করে পছন্দের ছবি তোলা বা এডিট করা মস্তিষ্কের সৃজনশীলতাকে প্রভাবিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউনিভার্সিটি অফ ল্যাঙ্ককেস্টার’য়ের গবেষণা অনুযায়ী, প্রতিদিন ছবি তোলা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এতে ছোট খাট বিষয়গুলো ধীর স্থির হতে এবং অর্থ খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
তাছাড়া ছবি তোলার জন্য বাইরে যাওয়া আসা হয়, যা মানসিক চাপ কমাতে খুব ভালো কাজ করে।