মানবাধিকার নিয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের উদ্বেগের জায়গায় নেই
সদ্য বাংলাদেশ সফরকারী জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী জাতিসংঘের দৃষ্টিতে মানবাধিকার বা অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশ সম্পর্কে কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়নি।
যে সকল দেশ ও অঞ্চলে মানবাধিকার ও মানবিক অধিকার নিয়ে সমস্যা ও উদ্বেগ রয়েছে, সেটি জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান মিশেলের গতকালের রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে। সেই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নেই। জাতিসংঘের এই রিপোর্টে গুম বা খুনের মতো বিশেষ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা যে সব দেশে বিরাজমান, সে বিষয়টিও উল্লেখিত হয়েছে।
মিশেলের রিপোর্টে রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অধিকার বিষয়ক মানবাধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এসকল ক্ষেত্রে নানা যুগান্তকারী অর্জনকে বিশেষভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এতে বাংলাদেশের কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কথা বিশদভাবে উঠে আসে। মিশেল ব্যাচেলেট কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে এক রোহিঙ্গা শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন তার স্বপ্ন ভঙ্গের কথা।
মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ ও মানবিক বিপর্যয়ের ফলে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে। রিপোর্টে মিয়ানমারে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে দায়ী করা হয়। এতে মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধের জন্য দেশটির ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানানো হয়।
আগামী ৩১ আগস্ট মিশেলের জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে চার বছরের মেয়াদ পূর্ণ হবে। এই উপলক্ষে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার গতকাল প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এই রিপোর্ট প্রকাশ করেন। তার এই রিপোর্টে মূলত জাতিসংঘের দৃষ্টিতে এই চার বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির একটা মূল্যায়ন করা হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিসের প্রধান হিসেবে বাংলাদেশসহ যেসকল দেশে মিশেল সফর করেছেন, তার একটা তালিকা উল্লেখ করেছেন। দেশ গুলো হলো বার্কিনা ফাসো, নাইজার, আফগানিস্তান, চীন, বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, পেরু এবং বাংলাদেশ।
মিশেল তার রিপোর্টে উল্লেখ করেন, তার এই মেয়াদকালে পৃথিবীর মৌলিক পরিবর্তন ঘটেছে। বৈশ্বিক কোভিড মহামারীর অপরিসীম নেতিবাচক প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এবং ইউক্রনে যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর দেশে দেশে তীব্র খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক সংকট বর্তমান বিশ্বের প্রধান তিন ইস্যু ।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মানবাধিকার সম্পর্কিত এডভোকেসি অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফলাফল আনে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলোম্বিয়ায় একটি মানবাধিকার কেন্দ্রিক ড্রাগ পলিসি কীভাবে সেখানকার চলমান সামাজিক- রাজনৈতিক সংকট থেকে মুক্তি পেতে পারে, সে বিষয়টি তুলে ধরা হয় ।
মিশেল তার মেয়াদকালে যে সকল দেশে গিয়েছেন, যে সব মানবাধিকার কর্মী ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলেছেন, সে বিষযে একটি সার সংক্ষেপ প্রকাশ করেন । রিপোর্টে আফগানিস্তানের নারী মানবাধিকার কর্মীদের সাহসের প্রশংসা করা হয় । মেক্সিকোর হারিয়ে যাওয়া মানুষদের মায়েদের শক্ত মনোবলের কথা বলা হয় । রিপাবলিক অফ কঙ্গোর যৌন নিপীড়নের শিকার নারীদের কথা বলা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন এবং অবৈধ মাইনিং এর কারণে নানা ঝুঁকিতে থাকা পেরুর আদিবাসীদের অধিকারের কথা বলা হয়। আফ্রিকার বারকিনা ফাসো তে আভ্যন্তরীণ বসতিহারা (ইন্টারনালী ডিসপ্লেসড) মানুষদের কথা উল্লেখ করা হয়। নাইজারের গ্রামাঞ্চলে মানবাধিকার রক্ষায় কমিউনিটি লিডারদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করা হয়।
রিপোর্টে ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে মানবিক বিপর্যয় হচ্ছে সেটি উল্লেখ করা হয়। ইউক্রেনের ওপর হামলা জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে অনুরোধ করা হয়। রিপোর্টে উভয় পক্ষকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও মানবিক আইনের নীতি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়।