মাদকের নিত্যনতুন রুট, বাংলাদেশ-ভারত বৈঠক
প্রতিনিয়ত নিত্যনতুন রুট ব্যবহার করে ভারত থেকে বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য প্রবেশ করছে। এসব রুটের বিষয়ে ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো ও বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
রুটগুলো বন্ধ করতে দুই দেশের মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ মিলে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা চলছে। ভারতও এ ব্যাপারে সহযোগিতার করা আশ্বাস দিয়েছে।
বুধবার (২৭ অক্টোবর) বাংলাদেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ভারতের নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর মহাপরিচালক পর্যায়ে ৭ম দ্বিপাক্ষিক ভার্চ্যুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সভা শেষে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আব্দুস সবুর মন্ডল।
তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে মাদকপাচারের নতুন নতুন রুট নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের কিছু তথ্য দিয়েছি, তারাও কিছু তথ্য দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত থাকায় উভয় দেশ আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্ব বহন করে। আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য দুই দেশই ভূমিকা রাখবে। ইয়াবা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারতের কিছু অঞ্চল দিয়ে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার হয়। সেটিও ভারতকে অবহিত করা হয়েছে।
সম্প্রতি মাদকপাচারে সমুদ্র পথ ব্যবহার করা হচ্ছে, গুরুত্ব দিয়ে এটা আলোচনা করা হয়েছে উল্লেখ করে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সমুদ্র পথে ইয়াবা পাচার বেড়েছে। কারণ স্থলপথগুলোতে কড়াকড়িতে হয়তো সমুদ্র পথে আসছে। ইয়াবার তুলনায় আইস আরও বেশি তীব্র আকার ধারণ করেছে, এ বিষয়ে উভয় দেশে তৎপর রয়েছে।
বিগত কয়েকটি সম্মেলনে ভারতের সীমান্তে থাকা ফেনসিডিল কারখানার তালিকা দিয়েছিল বাংলাদেশ। তালিকা অনুযায়ী যেসব কারখানা পাওয়া গেছে, ভারত সরকার সেগুলো ধ্বংস করেছে বলে বাংলাদেশকে জানানো হয়েছে।
মহাপরিচালক বলেন, আমাদের সমস্যাগুলো ভারতকে বলেছি। তারা সীমান্তের অনেকগুলো ফেনসিডিল কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা করে মাদক সমস্যা সমাধানে অগ্রসর হতে হবে। ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ মিলে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক আয়োজনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। ভারতও এ ব্যাপারে সহযোগিতার করা আশ্বাস দিয়েছে।
মিয়ানমার সরকার মাদক বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে এই হারে মাদক আসতো না। তবে মাদক চোরাচালান বন্ধে ভারতের উদ্যোগে সন্তোষ প্রকাশ করেন আব্দুস সবুর মন্ডল।
তিনি আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। উভয় দেশই বেশকিছু আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থার (বিমসটেক, সার্ক, কমনওয়েলথ) সদস্য। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ এবং ভারত মাদকদ্রব্য চোরাচালান এবং মাদক সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে একযোগে কাজ করছে। যার অংশ হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরো একসঙ্গে কাজ করছে।
সভায় উভয় পক্ষই সমুদ্র পথকে ব্যবহার করে মাদক চোরাচালান এবং মাদক সন্ত্রাসীদের উদ্ভাবিত নতুন নতুন রুট সম্পর্কিত তথ্য বিনিময়, কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনা বিষয়ক নীতিমালা ও বিধি-বিধান নিয়ে তথ্য বিনিময়, ফলপ্রসূ অপারেশনের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা বিনিময়, মাদক বিষয়ক প্রাসঙ্গিক অপরাপর সম্যক তথ্য বিনিময় এবং রিয়েল টাইম ইনফরমেশন শেয়ারিং এর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ক্ষেত্র উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। উভয় দেশের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকেই বিষয়ভিত্তিক তথ্য উপস্থাপন করা হয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে মাদক নিয়ন্ত্রণে দুই দেশ কীভাবে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়।