মাদকও নিয়ন্ত্রণে আসবে : প্রধানমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের মাটিতে যেমন জঙ্গিবাদ শেকড় গাড়তে পারেনি, তেমিন মাদকও নিয়ন্ত্রণে আসবে। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য মো. মুজিবুল হকের সম্পুরক এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদের মতো মাদকের বিরুদ্ধেও সর্বাত্মক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।’
সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকমুক্ত দেশ ও সমাজ গড়ে তোলার ওপর সবাইকে ভূমিকা রাখার আহŸান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সংসদ সদস্যদেরও নিজ নিজ এলাকায় কেউ যাতে মাদকাসক্ত না হয়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট থাকতে হবে। অন্য যারা জনপ্রতিনিধি রয়েছেন তাদেরও সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সচেষ্ট থাকতে হবে। মাদক ব্যবহার, বিক্রি বা বহন করা- এগুলো যে অপরাধ, জনগণ এ ব্যাপারে এখন যথেষ্ট সচেতন। সরকার যাদেরকে আত্মসমর্পন করাচ্ছে (মাদক ব্যবসায়ী), তাদের চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে রাখার পদক্ষেপ নিয়েছি। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা আত্মসমর্পণ করছে তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা অন্য কোন ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে ভালভাবে চলতে পারে। এভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কারণ, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।’
এর আগে মাহফুজুর রহমানের এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা জানান, মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও দমন অভিযানে ২০১৮ সালে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এক লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় এক লাখ ৬১ লাখ ৩২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাদকবিরোধী প্রচারাভিযানে ৩৫ লাখ ৮৫ হাজার ৭৯৬টি লিফলেট, এক লাখ ৮৩ হাজার ১৪৮টি স্টিকার, ১০ লাখ ১৭ হাজার ১৭১টি পোস্টার, এক লাখ দুই হাজার ৮০২টি বুলেটিন প্রকাশ ও ৬৪ হাজার ৪৩৬টি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ট্রাফিকের কারণে জনগণের বিড়ম্বনা যেন না হয় সে জন্য তিনি রাস্তায় বের হওয়া একপ্রকার ছেড়েই দিয়েছেন বলে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী সংসদকে জানান। এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলতে গেলে তো বের হওয়াই ছেড়ে দিয়েছি। আমি বের হলেই ট্রাফিক আটকায়। এজন্যই অফিস এবং কোথাও যদি কর্মসূচি থাকে সেখানে ছাড়া আর কোথাও যাওয়াই হয় না।’
বহরে গাড়ির সংখ্যা কমানো হয়েছে উলেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসি, দেখি, প্রধানমন্ত্রীর বহরে ৫২টি গাড়ি। আমি তা কেটে আটটি রাখার নির্দেশ দিয়েছি, নিরাপত্তা বাহিনী জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত গাড়ি না থাকে।’
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য। নিজের জন্য নয়, মানুষের জন্য কাজ করি। এ কারণে মানুষের কী ভালো, কোনটা ভালো না, তা জানার চেষ্টা করি। সেই অনুযায়ী সমস্যা থাকলে সমাধানের চেষ্টা করি। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। কাজেই এটাই আমাদের কর্তব্য। দায়িত্বটাকে কর্তব্য হিসেবে নিয়েছি। ক্ষমতাটা ভোগ করার বিষয় নয়, জনসেবা করার বিষয়। এ কারণেই মানুষের কল্যাণে কাজ করি।’
রাস্তায় বেশি সময় সিগন্যাল না দেওয়ার বিষয়ে ফিরোজ রশীদের প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণ করেন তাদের বলবো, বেশি সময় যেন ট্র্যাফিক আটকে রাখা না হয়।’ ডিজিটাল পদ্ধতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ হলে জনদুর্ভোগ কিছুটা কমে আসবে বলেও তিনি জানান।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যানজটের সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা ট্রাফিক রুল মানি না। পাশাপাশি রাস্তা-ফুটপাত দখল করে এখানে-সেখানে গাড়ি থামানো, পার্কিং করায় অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এটা না করে পরিকল্পিতভাবে সবাই চললে হয়তো এত সমস্যা হতো না।’
ঢাকার যানজট বিষয়ে চট্টগ্রাম-৪ আসনের দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর যানজট সমস্যা নিরসনে গত ১০ বছরে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে খুব শিগগিরই ঢাকা মহানগরী যানজটমুক্ত হবে।’
যানজট নিরসনে গৃহীত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শিগগিরই ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বন্ধ করে অটোমেটিক এবং রিমোর্ট কন্ট্রোলের সমন্বয়ে ট্রাফিক সিগন্যাল লাইট অনুযায়ী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুরু করা হবে।’
কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল তাদের স¤প্রচার কাজ সম্পন্ন করতে পারছে। এটি ব্যবহার করে বেসরকারি একাত্তর, সময়, বৈশাখী ও এনটিভি সরাসরি স¤প্রচার করছে। এর সাহায্যে আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রাপ্তির সুবিধা গ্রহণ করা হচ্ছে।’