মাঙ্কিপক্স করোনার মতো ভয়ঙ্কর সংক্রামক নয়
করোনা মহামারি শেষ হতে না হতেই বিশ্বজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে মাঙ্কিপক্স। ভাইরাসটির উৎপত্তি পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকায় হলেও বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে মাঙ্কিপক্স বিষয়ে বিশেষ সতর্কতাও জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত মোট ৯২ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হলেও সন্দেহভাজনের তালিকায় রয়েছে ১১১ জন। আফ্রিকা ছাড়িয়ে ভাইরাসটি ছড়িয়েছে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশে।
জানা যায়, মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের পেছনে রয়েছে মাঙ্কিপক্স নামের ভাইরাস। মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের প্রধান দুটি ধরন হচ্ছে, পশ্চিম আফ্রিকান ও মধ্য আফ্রিকান ধরণ। এটি স্মলপক্স ভাইরাস শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, জ্বর, মাথাব্যথা, ঘেমে যাওয়া, পিঠে ব্যথা, মাংসপেশির টান ও অবসাদ। জ্বর কমলে শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। অধিকাংশ ঘটনায় শুরুতে মুখে ফুসকুড়ি দেখা দেয়। পরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে হাতের তালু ও পায়ের তলায় ছড়ায় ফুসকুড়ি। সেই সঙ্গে আক্রান্তদের ত্বকে বসন্তের মতো দাগ দেখা দেয়।
সংক্রমণ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি খুব অল্পতেই সংক্রমিত করতে পারে না, দীর্ঘক্ষণের সংস্পর্শ দরকার হয়। মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ নতুন নয়, ১৯৭০ সাল থেকে বিভিন্ন সময় আফ্রিকার ১০টি দেশে বিক্ষিপ্তভাবে এর সংক্রমণ ঘটতে দেখা গেছে।
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। তবে এটিই আফ্রিকার বাইরে ভাইরাসটির প্রথম সংক্রমণের ঘটনা। সে সময় মোট ৮১ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। তবে এতে কারও প্রাণহানি ঘটেনি। ভাইরাসটিতে আগে আক্রান্তদের প্রায় সবারই ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থলের দেশগুলোতে ভ্রমণের ইতিহাস ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বলেন, বর্তমান সময়ে এটা অস্বাভাবিক সংক্রমণ। এর আগে মাঙ্কিপক্স আফ্রিকার কিছু প্রত্যন্ত অঞ্চলে সীমাবদ্ধ থাকতো। সেটা অন্যান্য দেশে এবং উন্নত দেশে পৌঁছেছে। খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছাড়া এটার সংক্রমণ হয় না। যারা আফ্রিকা ভ্রমণ করেছে, তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে এটা হতে পারে। তবে এটা সেলফ লিমিটেড ডিজিজ। এ রোগ সাধারণত নিজে নিজেই ভালো হয়ে যায়, তবে রোগটা কষ্ট দায়ক এবং দৃষ্টি কটু। এই রোগের বিশেষ দিক হচ্ছে দৃষ্টি কটু হবার ফলে, সে নিজেই নিজেকে আইসোলেটেড করে ফেলে। ফলে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ করোনার মতো ছড়ানোর সম্ভাবনা অনেকটাই কম।
তিনি আরও বলেন, এই রোগ আগে যেখানে প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেখা যেত, সেটা এখন কীভাবে এতগুলো দেশে ছড়ালো দেখার বিষয়। এই ভাইরাস স্মলপক্স গোত্রের এবং ভ্যাকসিনেও কাজ করে। ভাইরাসটি মিউটেশন করে তার ধরণ পরিবর্তন করেছে কিনা গবেষণার করে দেখতে হবে। কিংবা ধরণ বদলের কারণে কি সহজে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কিনা তাও দেখার বিষয়।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের সম্ভাবনা কতটুকু জানতে চাইলে এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশে প্রায় সবার স্মলপক্সের টিকা দেওয়া আছে, তাই আমাদের দুশ্চিন্তার তেমন কারণ নেই। তারপরেও সরকার যেসব সতর্কতা অবলম্বন করেছে, সেগুলো ঠিকভাবে কার্যকর করা দরকার। এটা নিয়ে খুব বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই।