মহামারীতে উপকারে আসবে জিপির হাজার কোটি টাকা: বিটিআরসি
নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরীক্ষা দাবির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার মধ্যে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বিতীয় ও শেষ কিস্তির ১০০০ কোটি টাকা জমা দিল গ্রামীণফোন।
৩১ মের মধ্যে এই টাকা বিটিআরসিতে জমা দেওয়ার কথা জানানোর একদিন পরেই মঙ্গলবার তা দিয়ে দেয় দেশের শীর্ষ এই মোবাইল ফোন অপারেটর।
এর আগে ২৩ ফেব্রয়ারি বিটিআরসিতে ১০০০ কোটি টাকা জমা দিয়েছিল গ্রামীণফোন।
মঙ্গলবার দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, “সময়ের আগেই বিটিআরসিতে টাকা জমা দেওয়ায় গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ জানাই। এটি রাষ্ট্রীয় অর্থ, জনগণের অর্থ। করোনা ক্রান্তিলগ্নে ১০০০ কোটি টাকা জমা দেয়ায় সরকারের উপকারে আসবে।”
“বিটিআরসি চাঁদাবাজ না, আইন সংগত যা পাওনা তাই দাবি করা হয়,” বলেন বিটিআরসি প্রধান।
বিটিআরসির কাছ থেকে গ্রামীণফোন তার নায্য পাওনা পেতে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমান সিইওর সাথে ভাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে এবং ভালোভাবে কাজ শুরু করা হয়েছে। যেসব এনওসি বন্ধ ছিল তার অনুমোদন দেওয়া শুরু হয়েছে এবং তা খুব দ্রুত এ অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।
নিরীক্ষা দাবির বিষয়গুলো ভবিষ্যতে কিভাবে সুরাহা করা হবে জানতে চাইলে বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, “উভয় পক্ষ একসাথে বসে একটি সিদ্ধান্তে আসা হবে। হিসাবে কম-বেশি হলে, গড়মিল থাকলে সঠিক তথ্য দিলে মেনে নেব। এখানে রি-অডিট করার প্রশ্ন আসেই না।”
অন্যান্য অপারেটরগুলোর নিরীক্ষা কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাইলে জহুরুল হক বলেন, “নিরীক্ষা প্রক্রিয়া শুরু করতে কয়েক মাস লেগে যায়, সব অপারেটরের অডিট করব, খুব শিগগিরই এয়ারটেলের নিরীক্ষা শুরু হচ্ছে।”
গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, “আইন মেনে চলা প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব। প্রথম কিস্তির টাকা দিয়েছি এবং দ্বিতীয় কিস্তির চেক সময়ের আগেই আজ বিটিআরসিতে জমা দিলাম। প্রথম কিস্তির টাকা জমা দেওয়ার পরপরই বিটিআরসির কাছ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পেয়ে আসছি। আমাদের যন্ত্রপাতি আসা শুরু হয়েছে।”
উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশের শক্ত অংশীদার হিসেবে গ্রামীণফোন কাজ করে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “মহামারী সময়ে সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। করোনাভাইরাসের কারণে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করার উপায় খুঁজতে হবে।”
করোনাভাইরাস সংকট কেটে যাওয়া মাত্র নিরীক্ষা বিষয়ে বিটিআরসির সাথে বৈঠক করা হবে জানিয়ে ইয়াসির বলেন, “শিগগিরই এ বিষয়ে একটি সমাধানে আসব বলে বিশ্বাস করি।”
বিটিআরসি বলে আসছে, গ্রামীণফোনের কাছে নিরীক্ষা আপত্তির ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার পাশাপাশি রবির কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে তাদের।
এই টাকা আদায়ে প্রথম ধাপে ব্যান্ডউইডথ কমিয়ে দিয়ে এবং দ্বিতীয় ধাপে গত ২২ জুলাই বিভিন্ন ধরনের সেবার অনুমোদন ও অনাপত্তিপত্র দেওয়া বন্ধ করে দেয় বিটিআরসি।
তাতেও কাজ না হওয়ায় গতবছর ৫ সেপ্টেম্বর লাইসেন্স বাতিলের হুমকি দিয়ে দুই অপারেটরকে নোটিস পাঠায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এমনকি বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রয়োজনে গ্রামীণফোনে প্রশাসক নিয়োগের কথাও বলেন।
বিটিআরসি সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তিতে রাজি না হওয়ায় গ্রামীণফোন গতবছর আদালতের দ্বারস্থ হয়। পরে অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে গ্রামীণফোন ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের মধ্যে দুই দফা বৈঠক হলেও তাতে সফলতা আসেনি।
গ্রামীণফোনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর বিটিআরসির নিরীক্ষা আপত্তি দাবির নোটিসের ওপর দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় হাই কোর্ট। বিটিআরসি লিভ টু আপিল করলে আপিল বিভাগ ২৪ নভেম্বর গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা দিতে নির্দেশ দেয়।