মহামারীকাল আরও দেড়-দুই বছর, বলছে মার্কিন গবেষণা
মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নতুন করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে আরও অন্তত দেড় থেকে দুই বছর সক্রিয় থাকতে পারে বলে ধারণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জনের পরেই প্রাণঘাতী ভাইরাসটি অকার্যকর হতে শুরু করবে, বলছেন তারা।
আগের মহামারীগুলো নিয়ে হওয়া গবেষণার উপর ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ইনফেকশাস ডিজিজ অ্যান্ড রিসার্চ পলিসি (সিআইডিআরআইপি) বৃহস্পতিবার নতুন করোনাভাইরাসের স্থায়ীত্বকাল নিয়ে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে যে তিনটি সম্ভাব্য পরিস্থিতির কথা বলা হয়েছে, তার কোনোটিতেই করোনাভাইরাস স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘মুছে যেতে পারে’ এমন আশাবাদ মেলেনি বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
সিআইডিআরআইপি যেদিন এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে, সেদিনই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প চীনের উহানের ল্যাব থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে এমন ‘প্রমাণ দেখেছেন’ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে এক ট্রিলিয়ন ডলারে মতো ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন বলে ইঙ্গিত দেন।
সংক্রমণের গতি-প্রকৃতি ও একে ঘিরে পরাশক্তিগুলোর মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বিশ্ব ২০২০ পূর্ববর্তী সময়ে সহসাই ফিরছে না বলে মত বিশ্লেষকদের।
সিআইডিআরআইপি’র প্রতিবেদনে দেওয়া তিনটি সম্ভাব্য চিত্রের প্রথমটিতে সংক্রমণের ধারাবাহিক ‘উত্থান, পতনের’ ভেতর দিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে করোনাভাইরাস ধীরে ধীরে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে।
“এই উত্থান-পতন অঞ্চলভেদে ভিন্ন হতে পারে। এটি নির্ভর করবে সংক্রমণ মোকাবেলায় নেওয়া বিধিনিষেধের ধরন ও তা কীভাবে তুলে নেওয়া হচ্ছে তার উপর,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ পরিস্থিতির ফলে আগামী এক থেকে দুই বছর নির্দিষ্ট সময় পরপর বিধিনিষেধ আরোপ ও তা শিথিল করা লাগতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
সম্ভাব্য দ্বিতীয় চিত্রটিকে ‘সবচেয়ে ভয়াবহ’ বলছে সিআইডিআরআইপি। এ ক্ষেত্রে শীতকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এখনকার চেয়ে অনেক অনেক বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তেমনটা হলে এবারের মহামারীও শতবর্ষ আগের স্প্যানিশ ফ্লু’র কারণে হওয়া পরিস্থিতিরই পুনরাবর্তন ঘটাতে পারে, বলছেন গবেষকরা। তখন লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ ও সংক্রমণ হারের লড়াইয়ের উপরই আক্রান্ত-মৃত্যুর সংখ্যা কম হবে না বেশি, তা নির্ভর করবে।
সিআইডিআরআইপি’র প্রতিবেদনে সবচেয়ে ইতিবাচক চিত্রেও করোনাভাইরাস ২০২২ সাল পর্যন্ত বিচরণ করবে ও মহামারী ধীরে ধীরে নিঃশেষ হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
“যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, বিধিনিষেধের মাত্রা অন্তত এখনকার মতো হলেও মহামারী থাকছেই। আমাদের আরও অন্তত ১৮ থেকে ২৪ মাসের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে,” বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোকে চলতি বছরের মধ্যে টিকা আবিষ্কার কিংবা ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জিত হচ্ছে না, এমন বাজে পরিস্থিতি বা সম্ভাব্য দ্বিতীয় চিত্রের জন্য প্রস্তুতি নিতেও অনুরোধ করা হয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমন এক সময়ে সিআইডিআরআইপি তাদের প্রতিবেদন দিল, যখন যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘায়িত হওয়া সত্ত্বেও দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করে চলেছে।
গত সপ্তাহের শুরুর দিকে কয়েকদিন মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজারের নিচে থাকলেও এখন দেশটিতে দিনপ্রতি মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দুই হাজার তিনশ’র আশপাশে ঘোরাফেরা করছে।
কোভিড-১৯ এ বিশ্বে এখন পর্যন্ত যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তার এক চতুর্থাংশের বেশিই যুক্তরাষ্ট্রের। নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির নেটওয়ার্ক সায়েন্স ইনস্টিটিউটের এক পূর্বাভাসে দেশটিতে গ্রীষ্মকাল শেষ হওয়ার আগেই অন্তত এক লাখ লোকের প্রাণহানি হতে যাচ্ছে বলে ধারণা দেয়া হয়েছে।
প্রাণঘাতী এ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবেলায় দেওয়া লকডাউনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবস্থাও শোচনীয়। এর পাশাপাশি প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় শুরুর দিকে যথেষ্ট পদক্ষেপ নিতে না পারার সমালোচনাও ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কমিয়ে দিচ্ছে।
এ অবস্থায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার ব্যর্থতার দায়ভার চীন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপর চাপাতে চাইছেন বলে ধারণা সমালোচকদের।
যে কারণে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালকের কার্যালয়ের বক্তব্যের সঙ্গে ট্রাম্পের অবস্থানের ভিন্নতা দেখা গেছে, বলছেন তারা।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলছে, নতুন করোনাভাইরাস ‘মানবসৃষ্ট’ এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ভাইরাসটি কোনো প্রাণীর দেহ থেকে নাকি চীনের ল্যাব থেকে দুর্ঘটনাবশত ছড়িয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানায় তারা।
অন্যদিকে ট্রাম্প নতুন করোনাভাইরাসের সঙ্গে উহানের ল্যাবের যোগসূত্র আছে, এমন প্রমাণ দেখার কথা জানিয়েছেন।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে চীনা পণ্যে আরও শুল্ক আরোপেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।