মহাখালী করোনা হাসপাতালে ১৯ ডেঙ্গুরোগী ভর্তি, ফাঁকা ৭১ শয্যা
ঢাকার ফার্মগেটে ব্যবসা করেন চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের আনোয়ার হোসেন। সেই সুবাদে ১৫ দিন আগে ঢাকা বেড়াতে আসেন তার স্ত্রী। সঙ্গে আনেন সাত বছরের সন্তান আকরাম হোসেনকে।
ঢাকা আসার চারদিনের মাথায় জ্বর আসে আকরামের। বাসায় চলছিল প্রাথমিক চিকিৎসা। কিন্তু কিছুতেই জ্বর কমছিল না। কিছু খেলেই বমি। পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো হয়। এতে জানা যা সে ডেঙ্গু পজিটিভ। তাৎক্ষণিক আনোয়ার হোসেন ছেলেকে নিয়ে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে যান।
এই হাসপাতালের চতুর্থ তলায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয় তাকে। সেখানেই আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা হয়।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গতকাল খোঁজ পেলাম এই হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী ভর্তি করানো হচ্ছে। দেরি না করে ছেলেকে নিয়ে চলে আসি। এখানের চিকিৎসকরা খুবই আন্তরিক। আজ সকাল থেকে ছেলেটা অল্প অল্প করে খেতে পারছে।
শুধু আনোয়ার হোসেনের ছেলে নয়, এমন আরও অনেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছেন। বর্তমানে অবনতি হয়েছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। সরকারি হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডগুলো এখন আর ফাঁকা নেই।
ফলে রোববার (২৩ অক্টোবর) থেকে মহাখালীর ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুরোগী ভর্তি।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১০টা পর্যন্ত এই হাসপাতালে ডেঙ্গুরোগী ভর্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে। তবে হাসপাতালটিতে ৯০ শয্যা রয়েছে। বাকি শয্যা এখনো ফাঁকা। ডেঙ্গু রোগীরা এখানে এলেই ভর্তি হতে পারবেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মিরপুর-১৪ নম্বরে বাসাবাড়িতে কাজ করেন পারভীন। ১০ দিন আগে তিনিও ডেঙ্গু আক্রান্ত হন। প্রথমে ভর্তি হন মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসার টাকা দিতে পারছিলেন না। পরে তাকে হাসপাতালের লোকজনই ডিএনসিসি করোনা হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। এখানে ফ্রিতে চিকিৎসা পাওয়ায় খুশি পারভীন।
আলাপকালে তিনি জানান, তার দুই ছেলেমেয়ে। দুজনের বয়সই ১০ বছরের কম। এরমধ্যে ছোট্ট এক মেয়েকে নিয়ে মিরপুরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। ছেলেটা বাড্ডার এক কওমি মাদরাসায় পড়ে। কয়েক বছর আগে স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এখন এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
জানতে চাইলে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক (এডমিন) কর্নেল একেএম জহিরুল হোসেন খান জাগো নিউজকে বলেন, তারা প্রাথমিকভাবে ৯০ শয্যা ডেঙ্গুরোগীর জন্য ঠিক করে রেখেছেন। আরও ৩০০ শয্যা রেডি করার কাজ চলছে। এছাড়া এখন ৪৯টি আইসিইউ শয্যা আছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।
তিনি বলেন, গতকাল থেকে রোগী ভর্তি হওয়া শুরু হয়েছে। আজ হয়তো আরও রোগী বাড়বে। তাদের চিকিৎসার জন্য ৫০ জন মেডিকেল অফিসার, ১৫ জন কনসালটেন্ট ও ৭০ জন নার্স চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। আশা করি আজকালের মধ্যে চিকিৎসকদের প্রেষণে এখানে পাঠানো হবে।
সবশেষ রোববার (২৩ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১ হাজার ৩৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ নিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৯২ জনে। এছাড়া এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।