মহাকাশে নববর্ষ উদযাপন
ঘুরে–বেড়িয়ে নববর্ষ উদযাপনের শখ অনেকেরই। তাই সুযোগ পেলে নতুন বছরের শুরুটা কাটাতে বিভিন্ন এলাকায় সফরে যান পর্যটকেরা।
কিন্তু মহাকাশে নববর্ষ উদযাপনের সুযোগ কজন পান? এদিক থেকে নভোচারীরা ভাগ্যবান। এবার যেমন মহাকাশে নববর্ষ উদ্যাপন করেছেন ১০ জন নভোচারী। এটি মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে একটি রেকর্ড।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম তাসের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। দেশটির মহাকাশ সংস্থা রসকসমস গত শনিবার জানিয়েছে, নববর্ষ উদযাপনের সময় আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ছিলেন সাত নভোচারী আর চীনের তিয়ানগং মহাকাশ স্টেশনে ছিলেন তিন নভোচারী। দুই মহাকাশ স্টেশনে ১০ নভোচারী খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপন করেছেন।
রসকসমসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, মনুষ্যবাহী মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে এটাই ছিল কক্ষপথে সবচেয়ে জমজমাট নববর্ষ উদযাপনের ঘটনা। গত ২১ বছরে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৮৩ নভোচারী নববর্ষ উদযাপনের সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন নভোচারী একাধিকবার মহাকাশে নববর্ষ উদযাপন করেছেন। তাদের মধ্যে রাশিয়ার নভোচারী আন্তন শকাপলরভ চারবার মহাকাশে নববর্ষ উদযাপন করলেন। তিনি ২০১২, ২০১৫, ২০১৮ ও ২০২২ সালের নববর্ষ মহাকাশে কাটিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নাসার নভোচারী মার্ক ভ্যান্ড হাই, থমাস মার্শবার্ন, রাজা চারি, কায়লা ব্যারন, ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার নভোচারী ম্যাথিয়াস মাওরারের সঙ্গে রয়েছেন রাশিয়ার আন্তন শকাপলরভ ও পিয়েতার ডাবরোভ। তিয়ানগং স্টেশনে রয়েছেন নভোচারী হাই ঝিগ্যাং, ওয়াং ওয়াপিং ও ই গাংফু।
মহাকাশযাত্রার প্রথম দিকে মহাকাশে নববর্ষ উদ্যাপন করার ঘটনা খুব কমই ঘটত। ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৮ সালে প্রথম নভোচারী হিসেবে ইউরি রোমেনেঙ্কো ও জর্জি গ্রেচেকো মহাকাশে নববর্ষ উদ্যাপনের সুযোগ পান। তবে ১৯৮৬ সালে সোভিয়েত মির স্পেস স্টেশন উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে নববর্ষ উদ্যাপনের ঘটনা নিয়মিত হয়ে ওঠে। মির স্পেস স্টেশনে ১২ জন নভোচারী নববর্ষ উদযাপনের সুযোগ পেয়েছিলেন।
স্পেস ডটকমের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নববর্ষ উদযাপনের আগে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে জার্মান নভোচারী ম্যাথিয়াস মাওরারের আয়োজনে বিশেষ রাতের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। পরে ওই আয়োজনের ভিডিও ধারণ করে তা প্রচার করা হয়। মাওরার তার টুইটারে লেখেন, ‘সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও ২০২২ সালের জন্য শুভকামনা। ’
পৃথিবী থেকে ২৬০ মাইল উচ্চতায় ঘণ্টায় ২৮ হাজার কিলোমিটার গতিতে ভ্রমণরত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের নভোচারীরা প্রতিদিন ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করেন। নিউইয়র্ক সিটিতে যখন নববর্ষের বেল বাজানো হয়, তার পাচ ঘণ্টা আগেই মহাকাশে নববর্ষ উদযাপন করে ফেলেন তারা।
ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নভোচারীরা নববর্ষের প্রথম প্রহরের ছবি তুলে তা টুইটারে পোস্ট করেন। ওই ছবি ব্যাপকভাবে নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। এসব ছবিতে ২০ হাজারের বেশি লাইক ও অনেক মন্তব্য করেছেন টুইটার ব্যবহারকারীরা।
মহাকাশে ভ্রমণ তথা পর্যটনের ধারণাটি নতুন নয়। এই সম্ভাবনা নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা ছিল, উদ্যোগও দেখা গেছে। তবে ২০২১ সালে এসে তা নতুন মাত্রা পায়। ২০২২ সালে মহাকাশে পর্যটনের বিষয়টি মানুষকে আরও বেশি আকৃষ্ট করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতোদিন কেবল মহাকাশে নভোচারীদের যাওয়ার সুযোগ ছিল। গত বছর বেসরকারি পর্যটনও শুরু হয়েছে। বিশ্ব যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণে কাঁপছিল, তখন অতিধনীরা একদিকে ব্যবসায় ফুলে ফেঁপে ওঠেন, অন্যদিকে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করে শখ মেটান। তিনজন নিজেদের সঙ্গে কিছু পর্যটক নিয়ে সোজা উড়াল দিয়েছেন মহাকাশে। তারা হলেন বর্তমান বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস ও ৫৮৯তম ধনী রিচার্ড ব্র্যানসন।
এদিকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটিকে ২০২৮ সাল পর্যন্ত নিরাপদ বলে মনে করা হচ্ছে। নাসার প্রধান নেলসন বলেছেন, তিনি আশা করছেন, ২০৩০ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি কাজ চালিয়ে যেতে পারবে। এ সময়ের মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে এর বিকল্প তৈরি করতে চাইছে নাসা। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়ে গেছে। বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশন তৈরিতে তিনটি সংস্থাকে কয়েক কোটি মার্কিন ডলার তহবিল সরবরাহ করছে নাসা।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের বিকল্প হিসেবে বাণিজ্যিক মহাকাশ স্টেশনগুলো ব্যবহার করা যাবে। নাসার অর্থায়ন পাওয়া সংস্থাগুলো হচ্ছে মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন, মহাকাশ সংস্থা ন্যানোর্যাকস ও প্রতিরক্ষা ঠিকাদার নর্থরপ গ্রুমান।