November 21, 2024
লেটেস্টসম্পাদকীয়

মঞ্চ ভেঙে পড়া ও নেতাকর্মীদের উশৃঙ্খল আচরণ: কতিপয় প্রশ্ন

প্রথমে তিনটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার উল্লেখ প্রয়োজন। এদের মধ্যে একটি সদ্য, যা আজই ঘটেছে। খবরে প্রকাশ, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির তিনটি অংগ-সংগঠন আয়োজিত সমাবেশ’-এর মঞ্চ নেতা-কর্মীদের ভারে ভেঙে পড়ে, যাতে এক সাংবাদিকসহ দুজন আহত হন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভেঙে পড়ার আগে বার বার মঞ্চ হতে আগত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হচ্ছিলো। কিন্তু কেউ সে আহবানে কর্ণপাত করেননি। ফলশ্রুতিতে, নেতাকর্মীদের ভারে একসময় মঞ্চটি ভেঙে পড়েছে। পরে আয়োজকেরা বেলা তিনটার দিকে সেখানে সাদা রঙের একটি ছোট পিকআপ ভ্যান আনেন। বেলা সোয়া তিনটার দিকে সেই পিকআপের ওপর বক্তব্যের জন্য মঞ্চ (ডায়াস) করে ও প্লাস্টিকের চেয়ার বসিয়ে সমাবেশ শুরু করা হয়। মঞ্চ ভেঙে পড়ার এই ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও এমনটি হয়েছে। একবার ওবায়দুল কাদেরের একটি সভায় হুড়মুড় করে মঞ্চ ভেঙে পড়েছিল। ভেঙে পড়ার সেই দৃশ্যটি ইন্টারনেটে ভাইরালও হয়েছিল। অত:পর তা নিয়ে শুরু হয়েছিল সীমাহীন ট্রল। তৃতীয় ঘটনাটি গত মাসের ২৩ জুন, যশোরের কোনো একটি জায়গার।

সেদিন ছিল আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সে সভাটি, প্রথমে, ভাল ভাবেই শুরু হয়েছিল।  কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি ন্যাক্কারজনকভাবে শেষ হয়। খারাপ সেই দৃশ্যটির ভিডিও নেটদুনিয়ায় ভাইরালও হয়ে পড়ে। দৃশ্যে দেখা যায়, কেক কাটার অল্পকিছুক্ষণের মধ্যেই বিশাল কেকটি অমার্জিত আচরণে ছিড়েফুড়ে কাড়াকাড়ি করে খেতে শুরু করেছেন উপস্থিত নেতাকর্মীগণ। কাড়াকাড়ির ফলে কেকটি মুহুর্তের মধ্যে নষ্টই হয়ে গেল। কারও মুখে, কারও হাতে, কারো জামায় লেগে রইল। কেকটি খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে গেল সেকেন্ডের মধ্যে, নষ্ট ও অপচয় হল। সে যে কী বেদনাদায়ক দৃশ্য! ভাষায় তার বর্ণনা হয় না। একটি দেশের সবচেয়ে প্রাচীন দলটির নেতাকর্মী দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কাটা কেক, তার বিতরণ ও খাওয়া নিয়ে বিশৃঙ্খলায় প্রবৃত্ত হয়েছেন। কাড়াকাড়ি করছেন। উশৃঙ্খল আচরণ করছেন।

এসব ঘটনা, সত্যি কথা বলতে কি, একটি অশুভ, খারাপ সময়ের কথা বলে। বলে এমন একটি সময়ের কথা, যখন কিছু মানুষের আচরণ উশৃঙ্খল, ব্যবহার অমার্জিত, কাজকারবার অসৌজন্যমূলক। এসব মানুষ যেন কিছুতেই সৌজন্যমূলক না হওয়ার জন্য দৃষ্টিকটুভাবে পণ করেছেন। যেন কিছুতেই তারা সামাজিক হবেন না, সহিষ্ণু ও সহনশীল হবেন না। তাঁরা কেমন যেন, তাঁদের অভিধান থেকে ধৈর্য্য ও স্থিরতা শব্দদুটিকে চিরতরে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এ যেন এমন এক সময়, যখন কোনো অর্ডার আর কাজ করবে না; এবং, সেটা সবার কাছে স্বাভাবিক হিসেবে গণ্য হবে। ভাবটা এমন যে, এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সত্যিই কি তাই? স্বাধীনতার ৫২ বছর পরে এসেও জাতীগত আচরণে আমরা সাবালক হবো না? এ্রভাবে একটি সমাজ ও রাষ্ট্র চলতে পারে কি? রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিকট হতে সাধারণ মানুষ দিকনির্দেশনা আশা করে, সদাচার আশা করে। তারাই যদি এরকম উশৃঙ্খল হয়ে ওঠেন, নিয়ন্ত্রণহীন ও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ওঠেন, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ কি? কোথায় যাচ্ছি আমরা?

শেয়ার করুন: