ভোট না হওয়ার চেয়ে বরং এটা ভালো : ওবায়দুল
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ঢাকার সিটি নির্বাচনে কম ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে আলোচনার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ভোট না হওয়ার চেয়ে বরং এটা ভালো। গত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি ঢাকার সিটি নির্বাচনে কেন এল না- সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতার কোনো বিষয় নয়।
এসব বিষয় ওইভাবে না দেখে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে। ডেমেক্রেসি তো রাখতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়াও থাকতে হবে। সংবিধানও চলবে। নিয়ম কানুন তো জলাঞ্জলি দেওয়া যাবে না। শুক্রবার দুপুরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ বিষয়ে কথা বলেন কাদের।
তিনি বলেন, নির্বাচনটা বন্ধ থাকার চেয়ে নির্বাচনটা হয়েছে। সাম ফর্ম অব ডেমেক্রেসি ইজ বেটার দ্যান নো ডেমেক্রেসি। সাম ফর্ম অব ইলেকশন ইজ বেটার দ্যান নো ইলেকশন। আনিসুল হকের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বৃহস্পতিবার উপনির্বাচন হয়। তাতে বিপুল ব্যবধানে মেয়র নির্বাচিত হন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম।
একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর কারচুপির অভিযোগ তোলা বিএনপি ও শরিকরা স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচন বর্জন করে। সেই সঙ্গে বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল কম, যা আলোচনার জন্ম দেয়।
নির্বাচন কমিশনের হিসাবে উত্তরের উপ নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৩০ শতাংশের সামান্য বেশি। ২০১৫ সালে এ সিটির নির্বাচনে ৩৭ শতাংশের মত ভোট পড়েছিল। ভোটে অংশ না নিলেও বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মেয়র কে হবেন তা আগের রাতেই ‘ঠিক হয়ে গিয়েছিল’।
এর জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে তো কেউ জোর করে নির্বাচন থেকে সরিয়ে রাখেনি। তারা নিজেরাই নির্বাচনে আসেনি। তারা না এসে সমালোচনা করলে তো হবে না। তারা এসে নির্বাচন নিয়ে কথা বললে একটা কথা ছিল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বৃহস্পতিবার ভোট চলাকালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ভোটকেন্দ্রে ভোটার না আসার দায় নির্বাচন কমিশনের নয়। এ দায় রাজনৈতিক দলগুলোর এবং প্রার্থীদের।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা ব্যর্থতা সফলতার বিষয় নয়, এটা বাস্তবতা। যারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিল, তারা এখানে এল না কেন? সে ব্যর্থতার দায় কি সরকারি দল নেবে?
তারা অংশ না নিলে আমরা কি তাদের বাধ্য করব?… কাজেই ব্যর্থতা সফলতা নয়, এটা বাস্তবতা। এটাই স্থানীয় সরকার নির্বাচন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারি দল যদি হেরেও যায়, তবুও তো আকাশ ভেঙে পরবে না।
ভোটার উপস্থিত কম হওয়ার সম্ভাব্য কতগুলো কারণ তুলে ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ভোটের সকালে আবহাওয়া খারাপ ছিল। তিন দিনের ছুটি পেয়ে অনেকে বাড়ি চলে গেছেন। কিন্তু আপনাদের কি মনে আছে, ২০০১ সালে ঢাকা সিটি নির্বাচনের কথা? সেই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন তো টেন পার্সেন্ট লোক উপস্থিত ছিল। তাহলে তুলনা করেন ওটা তো একেবারেই ভোটারশূন্য নির্বাচন ছিল। ২০০১ সালে ১০ ভাগ ভোট নিয়ে সাদেক হোসেন খোকা মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবার এত কিছুর পরেও তুলনামূলক উপস্থিতি অনেক বেশি।
বিএনপি ‘সুবিধা দেখে’ নির্বাচনে অংশ নেয় মন্তব্য করে কাদের বলেন, এর আগে তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। তখন চারটি সিটি করপোরেশনে তারা জিতেছিল। তাতে তো আকাশ ভেঙে পড়েনি। রাজনীতি জোয়ার ভাটার মতে। আজকে আমরা আছি, কাল নাও থাকতে পারি। একটি রাজনৈতিক দল আজীবন ক্ষমতায় থাকবে এমন অহমবোধ থাকা উচিত নয়।
বিএনপি তাদের রাজনৈতিক ধারা না বদলালে আগামী জাতীয় নির্বাচনে তাদের অবস্থা ‘আরও খারাপ’ হবে বলে মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচন থেকে দূরে সরে যাওয়া মোটেই গণতান্ত্রিক পথ নয়। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের নেতাকর্মীরা কিন্তু অংশ নিচ্ছে। অংশ নেওয়া নেতাদের বহিষ্কার করা হলেও মাঠের কর্মীরা থেমে নেই।
রাজনীতিতে ‘ব্যর্থ’ বিএনপির এখন ‘কথামালার চাতুরি’ ছাড়া আর কিছু করার নেই বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও সদস্য এস এম কামাল হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।