ভোটের রাজনীতি ধ্বংস করে গিয়েছিল জিয়া : প্রধানমন্ত্রী
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বাংলাদেশের ‘নির্বাচনের রাজনীতি’ ধ্বংসের জন্য সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমান এদেশের ভোটের রাজনীতিটাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করল। তার হ্যাঁ-না ভোট, তার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন।
সেনাপ্রধান আবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়ে সেই অবস্থায় নির্বাচন করার অর্থ হল একদিকে সেনা আইন ভঙ্গ করা, সেনাবাহিনীর রুলস রেগুলেশন ভঙ্গ করা, অপরদিকে সংবিধান লংঘন করা। এই যে একটা অনিয়মের যাত্রা শুরু, এই প্রক্রিয়াই চলতে থাকল বাংলাদেশে।
আওয়ামী লীগ আমলে গত দুটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রশ্ন তুলে আসার মধ্যে সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় একথা বলেন শেখ হাসিনা।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ১৯৭৫ সালে জাতির জনক হত্যাকাণ্ডের পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছিলেন সেনা কর্মকর্তা জিয়া। পরে তিনি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন, গড়ে তোলেন বিএনপি নামে দলটি।
সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ই তার রাজনৈতিক দলে দায়িত্ব নেওয়া নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব সমালোচনার পাল্টায় বিএনপি নেতারা দাবি করে আসছেন, জিয়াই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছু লোক খুব বাহবা দিল জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছে। এটা যদি সত্যিই বহুদলীয় গণতন্ত্র হয় তাহলে ক্ষমতায় বসে থেকে, ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে সে যে একটি দল গঠন করল এবং সে দলও একবার ১৯ দফা কর্মসূচি .. এরপর আসল কি? জাগো দল..এরপর আসলো কী কী সবৃ তারপর আসলো বিএনপি।
এই ৩/৪ ধাপ পার করে একটা দল করল আর সেই দল সৃষ্টির সাথে সাথে যারা ক্ষমতায় বসে ক্যান্টনমেন্ট থেকে সৃষ্ট করা দল..যারা হাঁটতে শিখলো না, চলতেও শিখলো না, কারও কাছে যেতেও শিখলো না, তারা টু থার্ড মেজরিটি পেয়ে গেল!
এই মেজরিটি পাওয়ার পেছনে রহস্যটা হল অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান চেয়েছিল, যে সংবিধান লংঘন করে ক্ষমতায় এসেছে, কাজেই সংবিধান সংশোধন করে তার অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার একটা পদ্ধতি পাওয়ার জন্যই টু থার্ড মেজরিটি দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, কাজেই এই অবৈধ ক্ষমতা বৈধকরণের আকাঙ্খায় এই যে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করা, জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার যাত্রা শুরু।
কিছু লোককে উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে অর্থশালী, সম্পদশালী করা, একটা এলিট শ্রেণী তৈরি করা এবং আজকে যে ব্যাংকের টাকা ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়া, ঋণখেলাপি, ঘুষ দুর্নীতি, মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি যা যা সৃষ্টি হয়েছিল সবই সেখান থেকে আসল। এই পদ্ধতি একের পর এক চলতে থাকল সেই ৯৬ সাল পর্যন্ত।
জিয়ার পথ ধরে এরশাদ ক্ষমতায় এসেছে, আবার খালেদা জিয়ার ক্ষমতা দখলটাও ওই একই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ছিল। ক্যান্টনমেন্ট বসেই সে ক্ষমতাটা দখল করেছিল। জনগণ তাদের ভোট দিয়ে যেভাবে প্রতিনিধি নির্বাচন সেই সুযোগটা তখনও আসেনি। এরপর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর পরিস্থিতির বদল ঘটে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
আমরা আগাগোড়া গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছি। কিন্তু আমার অবাক লাগে যে জিয়ার যে ভাঁওতাবাজি যে বহুদলীয় গণতন্ত্র, অনেক দল সৃষ্টি করতে পারলেই কি সেটা বহুদলীয় গণতন্ত্র হয়। যেখানে মানুষের কথা বলার অধিকার নাই, প্রতি রাতে কারফিউ, চলার অধিকার নাই, মার্শাল ল জারি, সেখানে মানুষের অধিকারটা থাকে কী করে?
আমাদের দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণীরা জিয়ার পিঠ চাপড়িয়ে চাপড়িয়ে অথবা তার পদলেহন করে তাকে বাহবা দিতে শুরু করেছিল আর তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্ষমতায় এসেছিল জেনারেল এরশাদ আর সেই এরশাদের বিরুদ্ধে আমরা সংগ্রাম করেছি এর পরে আসলো খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের মানুষের কিন্তু ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি।
শেখ হাসিনা বলেন, পরিবর্তন হয়েছে কেবল জাতির জনকের হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে, তখনই এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে। অনুষ্ঠানে দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আজকে আমরা জাতির পিতার জন্মদিন পালন করছি। ২০২০ সাল থেকে ২০২১ সাল এই সময়টাকে আমরা ঘোষণা দিয়েছি মুজিব বর্ষ হিসেবে। আমরা জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করব। কমিটি করেছি, আমি চাই, সারা বাংলাদেশ ইউনিয়ন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা এলাকায় এখন থেকে সকলকে প্রস্তুতি নিতে হবে জাতির পিতার জন্মদিন থেকেই শুরু হবে জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তুতি। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলে জাতির পিতার স্বপ্ন আমাদের পূরণ করতে হবে, বলেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদের সঞ্চালনায় এই সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহাবুব-উল আলম হানিফ প্রমুখ।