ভোটকেন্দ্র হলে রেখেই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের বিরোধিতার মধ্যে ভোটকেন্দ্র হলে রেখেই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। আগামী ১১ মার্চ অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার শেষ সময় ২ মার্চ; যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে ৩ মার্চ। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ৫ মার্চ।
১১ মার্চ সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হলগুলোতে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দিতে পারবেন। দীর্ঘদিন পর এবার ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার সঙ্গে থেকে ভোটগ্রহণ কোথায় হবে, তা নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়।
আগের মতো হলগুলোতে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে ছাত্রলীগ স্বাগত জানালেও ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগগুলো একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি তোলে। তবে কর্তৃপক্ষ আগের মতোই হলেই ভোটকেন্দ্র রাখার সিদ্ধান্ত নিল।
সোমবার সকালে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন ডাকসু নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট হলের ভোটার (আবাসিক ও অনাবাসিক) তার নিজ নিজ হলের ভোটকেন্দ্রে বৈধ পরিচয়পত্র দেখিয়ে ভোট দেবেন। ডাকসুতে পদাধিকার বলে উপাচার্য সভাপতির দায়িত্বে থাকেন। বাকি ২৫টি পদে নির্বাচন হবে।
পদগুলো হল সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, সংস্কৃতি সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক, সমাজ সেবা সম্পাদক এবং ১৩ জন সদস্য।
আগামী ১১ ফেব্র“য়ারি সোমবার হলের নোটিস বোর্ড ও ডাকসুর ওয়েবসাইটে খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ১৮ ফেব্র“য়ারির মধ্যে আপত্তি গ্রহণের পর খসড়া ভোটার তালিকা সংশোধন করে ২০ ফেব্র“য়ারি প্রকাশ করা হবে।
হলগুলোর প্রাধ্যক্ষের কার্যালয় থেকে ১৯ ফেব্র“য়ারি থেকে ২৫ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। ২৬ ফেব্র“য়ারি সকাল ৯টা থেকে ১২টার মধ্যে হলের রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। ২৬ ফেব্র“য়ারি দুপুর ২টায় ডাকসুর মনোনয়নপত্র বাছাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
২৭ ফেব্র“য়ারি হলের নোটিস বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে। প্রকাশিত তালিকার বিষয়ে কোনো প্রার্থীর আপত্তি থাকলে তা ২৮ ফেব্র“য়ারি দুপুর ১২টার মধ্যে তা ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ২ মার্চ। ৩ মার্চ হলের নোটিস বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা। ৫ মার্চ সম্পূরক ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে হলের নোটিস বোর্ড ও ডাকসুর ওয়েবসাইটে।
হল সংসদে ১৩টি পদের জন্য নির্বাচন হবে। পদগুলো হল সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সহ-সাধারণ সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, সংস্কৃতি সম্পাদক, পাঠকক্ষ সম্পাদক, আভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক, বহিরাঙ্গন ক্রীড়া সম্পাদক, সমাজসেবা সম্পাদক ও ৪ জন সদস্য।
হল সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বিতরণ, জমা বাছাই ও প্রত্যাহারের তারিখ কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য নির্ধারিত তারিখেই রাখা হয়েছে। তবে প্রচার ও প্রচারণার বিষয়ে তফসিলে কিছু বলা হয়নি। এ বিষয়ে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রশ্ন করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।
তিন দশক পর আদালতের নির্দেশে ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে, তারপর আর নির্বাচন হয়নি।ডাকসু নির্বাচন চেয়ে আদালতে রিট আবেদন হয়েছিল, তাতে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা আসে গত বছর হাই কোর্ট থেকে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনে ওই আদেশ স্থগিত করেছিল আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। আপিল বিভাগ গত ৬ জানুয়ারি সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নিলে নির্বাচন আয়োজনের বাধা কাটে।
এরপর নির্বাচনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমানকে প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং আরও পাঁচজনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়।