ভেবেছিলাম ড. কামাল বিএনপিকে সৌজন্য শেখাবেন : হাছান মাহমুদ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতারা প্রধানমন্ত্রীর চায়ের দাওয়াতে না যাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন বিএনপির সঙ্গে জোট করার পর দলটির নেতাদের ‘সৌজন্য শেখাবেন’ বলে আশা করেছিলেন তারা। কিন্তু এখন দেখছেন হয়েছে তার উল্টোটা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সংলাপে অংশ নেওয়া রাজনীতিকদের শনিবার গণভবনে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতির’ অভিযোগকারী ঐক্যফ্রন্ট নেতারা প্রধানমন্ত্রীর এই আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
গতকাল রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় এই প্রসঙ্গ তুলে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
নেতিবাচক’ রাজনীতির কারণে বিএনপি নেতারা ওই অনুষ্ঠানে যাননি দাবি করে তিনি বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে সৌজন্য শেখাবেন। এখন দেখা যাচ্ছে ড. কামাল হোসেন তাদের সাথে যাওয়ার পর তার নিজের মধ্যে যে সৌজন্য ছিল সেটাও হারিয়ে গেছে। তিনি তাদের শেখানোর পরিবর্তে তাদের মধ্যে যে অসৌজন্যমূলক আচরণ সেটি দ্বারা তিনি প্রভাবিত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না দাবি করে ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি এবার গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটে অংশ নিয়েছিল। তবে ওই ভোটে ভরাডুবি হওয়ার পর তারা বলেছে, তাদের পাঁচ বছর আগে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তই ঠিক ছিল।
গত কয়েক বছর ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘গণতন্ত্র হরণের’ অভিযোগ করে আসা বিএনপি নেতারা এখন বলছেন, রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠান ‘ধ্বংস করে দিয়েছে’ তারা। এই প্রেক্ষাপটে রাজনীতির মাঠে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখলেও রাজনীতিকদের মধ্যে সৌজন্য রক্ষার জন্য বিরোধীদের প্রতি আহŸান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, অনেক বিরোধী দলীয় নেতাকে দেখি, যারা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও অনেক সময় সামাজিকতা রক্ষা করেন না। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায়, সামাজিক সৌজন্য, সমাজিক ভদ্রতা আমাদের রক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক বিরোধিতা থাকবেই। রাজনীতির মাঠে একে অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে সৌজন্য বোধ থাকা প্রয়োজন। এখনকার বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে সেটি এখন লক্ষ করি না, যেটি সমীচীন নয়।
নির্বাচনে ভরাডুবির পর ঐক্যফ্রন্ট নিজেদের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান। তিনি বলেন, আজকে কাগজে দেখলাম আ স ম রব সাহেব বলেছেন, কর্নেল অলি সাহেব বলেছেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবও বলেছেন- আর কোনো নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে না।
কারণ কোনো কিছুর উপরই তাদের আস্থা নেই। পুলিশের উপর তাদের আস্থা নেই, নির্বাচন কমিশনের উপর তাদের আস্থা নেই, আমাদের সমস্ত আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কারো উপর তাদের আস্থা নেই। আসলে তাদের নিজেদের উপর তাদের আস্থা নেই। তারা নিজেদের উপর নিজেরা আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন।
বিএনপি নেতাদের প্রতি আগামী নির্বাচনগুলোতে অংশ নেওয়ার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যে বিজয় অর্জন করেছে, তাতে বিএনপি জনগণ থেকে বহু দূরে সরে গেছে। বিএনপি থেকে জনগণের যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেটি একমাত্র নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কমানো সম্ভব।
তাদেরকে অনুরোধ জানাব, নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচন প্রতিহত করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন, তাহলে আপনাদের রাজনীতিটা টিকবে। আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট।
জোটের কার্যকরী সভাপতি এ টি এম শামসুজ্জামানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক অরুন সরকার রানার সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগ নেতা বলরাম পোদ্দার, মিজানুর রহমান বিটু বক্তব্য রাখেন।