ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না: শিক্ষামন্ত্রী
এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যেসব শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ভুল প্রশ্নে নেওয়া হয়েছে, তাদের উত্তরপত্র আলাদা করে রাখা হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলছেন, এরা কোনোভাবেই ‘ক্ষতিগ্রস্ত হবে না’।
বোর্ডের নির্দেশনা মেনে নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের বসানোর আলাদা ব্যবস্থা করলে এই সমস্যা হত না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
‘স্কিলস রেডিনেস ফর এচিভিং এসডিজিস অ্যান্ড এডপটিং আইআর ৪.০’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গৃহীত ঢাকা ঘোষণা নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এ কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী।
এসএসসির প্রথম দিনের প্রশ্ন বিতরণে সমস্যা হয়েছে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, “প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা সে সকল উত্তরপত্র আলাদা করে রেখেছি এবং পরীক্ষার্থীরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা আমরা গ্রহণ করেছি।”
চলতি বছর ২০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৭৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এ পরীক্ষা ৫ মার্চ পর্যন্ত চলবে।
বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, এসএসসিতে সর্বোচ্চ চারটি পত্রে ফেল করলে ওইসব বিষয়ে পরের বছর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায় শিক্ষার্থীরা। অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে তাদের জন্য নির্ধারিত সিলেবাসে আলাদা প্রশ্নপত্র তৈরি হয়।
বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষার হলে নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের আলাদাভাবে বসানোর কথা। কিন্তু এবার এসএসসির প্রথম দিন লালমনিরহাট, নীলফামারি, টাঙ্গাইল, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রে কয়েকশ নিয়মিত পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়।
এসএসসি পরীক্ষা শুরুর দিন ঢাকার তেজগাঁও সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে কেন্দ্র পরিদর্শনের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, এবার ৫২ হাজার কক্ষে মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। ভুল প্রশ্ন বিতরণের ঘটনা ঘটেছে ১৫টি কক্ষে।
“সেই অর্থে সংখ্যার হিসেবে হয়ত খুবই নগণ্য। কিন্তু এই ১৫-টিইবা কেন হবে? যে শিক্ষক সেখানে আছেন যিনি প্রশ্নপত্র দেবেন। প্রথমে কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার, পুলিশের প্রতিনিধিসহ সেটি খোলার প্রক্রিয়া দেখবেন। তারপর শিক্ষকরা সেটকোড অনুযায়ী দেখে বের করবেন। যে শিক্ষক বিতরণ করতে যাচ্ছেন তার দেখার কথা। এমনকি পরীক্ষার্থীরা কিন্তু প্রশ্ন পাওয়ার পর তারও দেখার কথা।
“ল্যাপস হয়ে গেলে অনেকগুলো ধাপে হয়। যেখানে সমস্যা হয়েছে সবগুলো ধাপেই সমস্যা হয়েছে। পরীক্ষার্থীরা তখন পরীক্ষার উৎকণ্ঠায় থাকেন, সে না দেখেতে পারে। কিন্তু বাকিদের সেটি দেখা অবশ্য কর্তব্য এবং দেখতেই হবে।”
কোনোভাবেই যেন কোনো কেন্দ্রে আর ভুল প্রশ্নপত্র বিতরণ না হয় সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এ বিষয়গুলো আগে যা হত তার থেকে কমে এসেছে। একেবারেই যেন না থাকে, এটাকে শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা যায়, সেজন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং সেটা থাকবে।”
গাইড বইয়ের প্রশ্ন হুবহু এসএসসির প্রশ্নে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “কোনো প্রশ্ন একেবারে রিপিট হবে না সেটা করা কিন্তু শক্ত। গাইড বইগুলো তো বোর্ডের প্রশ্ন নিয়ে নিয়ে ছাপায়।
“৫ হাজার ৫৮০ সেট প্রশ্ন প্রণয়ন করা হয়েছে। কি বিশাল কর্মযজ্ঞ একবার শুধু চিন্তা করে দেখেন। সেখান থেকে ২ হাজার ৭৯০ সেট প্রশ্ন ছাপানো হয়েছে। অনেক সেটার ও মডারেটর লাগে। যারা প্রশ্ন সেট করেন সেটি যেমন বোর্ডের কেউ দেখতে পারেন না, দেখার সুযোগ থাকে না। কিছু না কিছু প্রশ্ন সারা জীবনই রিপিট হয়।”
এসএসসির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নিজের সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দীপু মনি বলেন, “আমরা তো তার আগের ১০ বছরের প্রশ্ন দেখে আন্দাজ করে পড়তাম। একেবারেই কোনো প্রশ্ন কোনো দিন রিপিট হবে না এটা কিন্তু ইম্পসিবল প্রায়। তাহলে একদম বইপত্রই পুরো পাল্টে ফেলতে হবে।”
তারপরও গাইড বইয়ের প্রশ্ন হুবহু না হওয়া উচিত মত দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কারা ওই প্রশ্নপত্র করেছেন তা শনাক্ত করা হয়েছে। গাইড বই, নোটবই ব্যবহার সরকার বন্ধ করতে চায়, কারণ এখন যে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাতে গাইড বইয়ের প্রয়োজন থাকার কথা নয়।
“গাইড বই, নোট বই মুদ্রণকারী প্রতিষ্ঠান অনৈতিকভাবে কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আর্থিকভাবে প্রভাবিত করে শিক্ষার্থীদের এসব গাইড বই, নোটবই কিনতে বাধ্য করে। সেজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে।”
গাইড বই ও নোট বইয়ের বিক্রি বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনেরও সহযোগিতা চান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সারা দেশে, প্রতিটি জায়গায় এই বিষয়গুলো বন্ধ করা কোনো দিনই সম্ভব নয়, যদি আমরা সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা না পাই।”