January 19, 2025
জাতীয়লেটেস্ট

ভুল তদন্ত : সাজা বাতিল, আইও’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থার নির্দেশ

এসএসসি পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির ঘটনায় নোয়াখালীতে নামের মিল থাকায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ভুল তদন্তে ১৫ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত নিরপরাধ কামরুল ইসলামের সাজা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।

একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে জারি করা পরোয়ানা (রিকল) প্রত্যাহার করে মামলা পুনরায় তদন্ত করতে এবং তদন্তকারীর (আইও) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশ দেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।

আদালতে আজ দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মো. সারোয়ার হোসেন বাপ্পী। রিট আবেদনকারী মোহাম্মদ কামরুলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী বিজয়া বড়ুয়া।

রায়ের পর আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এর আগে দেয়া রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। সাজা পরোয়ানার ভিত্তিতে কামরুলকে হয়রানি ও গ্রেফতারের কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাকে জড়িয়ে দেয়া সাজার রায় বাতিল করা হয়েছে। ফলে মোহাম্মদ কামরুল এ মামলার দায় থেকে অব্যাহতি পেলেন।

তিনি আরও বলেন, রায়ে মোহাম্মদ কামরুলের ক্ষেত্রে সাজা পরোয়ানা (কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড) প্রত্যাহার করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এই ভুলের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলাটি নতুন করে তদন্ত করতেও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। রায়ে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলে তা দুদককে বিবেচনা করতে বলেন হাইকোর্ট।

রায় ঘোষণার আগে শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, যদি দুদকের কমিশনারসহ সবাই জনসমক্ষে তাদের হিসাববিবরণী প্রকাশ করেন, তাহলে কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা আরও বেশি বাড়বে। আদালতের এই বার্তা দুদককে জানিয়ে দেয়া হবে বলে জানান সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।

এর আগে ২৬ জানুয়ারি সনদ জালিয়াতির ঘটনায় ভুল স্বীকার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

১৯৯৮ সালের এসএসসি পরীক্ষার সনদ জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। তবে কাকতালীয়ভাবে বাবা ও ছেলের নামে মিল থাকায় তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো অভিযুক্ত করে ২০০৬ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী নোয়াখালী সদরের পশ্চিম রাজারামপুর গ্রামের কামরুলকে। এরপর বিষয়টি সুরাহা করতে উচ্চ আদালতে আসলে দেখা যায়, সেই সনদ জালিয়াতির ঘটনায় অভিযোগপত্র দেয়া হয় পশ্চিম রাজারামপুরের পাশের পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় হাইকোর্ট রুল জারি করেছিলেন। সেই রুলের শুনানিতে ২৬ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষ থেকে ভুল স্বীকার করে বলা হয়- ‘সরল বিশ্বাসের ভুল (বোনাফাইড মিসটেক)’।

মামলার সূত্র দিয়ে আইনজীবীরা জানান, ১৯৯৮ সালের এসএসসির সনদ জালিয়াতি করে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছেন এক যুবক। এমন অভিযোগ এনে ২০০৩ সালের মামলা করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন কমিশন। তদন্ত শেষে দশ বছর পর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে মামলার বিচার শেষে আসামিকে পলাতক দেখিয়ে তিনটি ধারায় পাঁচ বছর করে ১৫ বছরের সাজা দেন বিচারিক আদালত। পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা করে ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডও দেন আদালত।

এ ঘটনায় যাকে দণ্ড দেয়া হয় সেই দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা দেখে নিরপরাধ যুবক হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনে তিনি বলেন, আমার জন্ম ১৯৯০ সালে। এমনকি সংশ্লিষ্ট কলেজে কোনোদিন ভর্তিও হইনি। এরপর ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন।

রিটের নথি থেকে আরও জানা যায়, ২০০৩ সালের সালের জানুয়ারিতে দুর্নীতি দমন ব্যুরোর কুমিল্লা অঞ্চলের প্রসিকিউটিং পরিদর্শক মো. শহীদুল আলম একটি এজাহার (এফআইআর) দায়ের করেন।

মামলায় বলা হয়, নোয়াখালী সদর থানার পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে কামরুল ইসলাম নোয়াখালী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৫৭৬ নম্বর পেয়ে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাশের ভুয়া মার্কশিট ও প্রশংসাপত্র সৃজন বা সংগ্রহ করে ১৯৮৯-৯০ সেশনে মাইজদী পাবলিক কলেজে ভর্তি হন।

পরে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর চার্জশিট জমা দিলে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর রায় দেন আদালত। রায়ে কামরুল ইসলামকে পেনাল কোডের ৪৬৭ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৬৮ ধারায় ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, ৪৭১ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

রায়ে বলা হয়, সব কারাদণ্ড একত্রে চলবে, কিন্তু অর্থদণ্ড পৃথক-পৃথকভাবে দিতে হবে। অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

এ রায়ের পর পুলিশি তৎপরতা দেখে নোয়াখালী সদরের পূর্ব রাজারামপুরের মো.আবুল খায়েরের ছেলে রিটকারী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে রিট করেন। এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর রুল জারি করেন এবং দুদকের কাছে এ ঘটনার ব্যাখ্যা চান। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী রুলের জবাব দিয়ে দুদক ভুল স্বীকার করে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *