ভুলে ভরা ম্যাচে বিব্রতকর হার
দুই দলের প্রথম ইনিংস শেষেই ইন্দোর টেস্টের ফল নিয়ে বাস্তবিক সব অনিশ্চয়তা কেটে গিয়েছিল। শুধু দেখার ছিল বাংলাদেশ লড়াই করতে পারে কতটা, ব্যবধান কতখানি কমাতে পারে। দেখা মেলেনি তাদের চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞার, পারেনি লড়াইয়ের মানিসকতা দেখাতেও। আবারও ব্যাটিং ব্যর্থতায় মুমিনুল হকের দল তিন দিনেই হেরেছে ইনিংসে ব্যবধানে।
প্রথম টেস্ট ইনিংস ও ১৩০ রানে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেছে ভারত। ৩৪৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ২১৩ রানে।
দিনের শুরুতে সুনীল গাভাস্কার বলেছিলেন, “এখানে লড়াই করে টিকে থাকার মানসিক শক্তি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আছে কি না। যদি সেখানে তারা উন্নতি করতে না পারে, ম্যাচ শেষ হতে পারে আজ বিকেলেই।” ঠিক তাই হয়েছে। বাংলাদেশের শেষ উইকেটের যখন পতন হয় তখনও দিনের খেলা বাকি ১৯.৪ ওভার।
দ্বিতীয় দিনের স্কোরেই ইনিংস ঘোষণা করে ভারত। যেন কিছুই পাল্টায়নি। প্রথম সকাল বাংলাদেশ যেমন ছিল, তৃতীয় সকালেও থেকেছে তেমনই। দুই ইনিংসের শুরুটায় কী দারুণ মিল! প্রথম ইনিংসে দুই ওপেনার করেছিলেন ৬ করে, এবারও ইমরুল কায়েস ও সাদমান ইসলাম ফিরলেন ঠিক ৬ রানে।
এবারও ইমরুলকে ফেরান উমেশ। ব্যাট-প্যাডে বিশাল ফাঁক রেখে জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ করেছিলেন তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হয়ে যান বাঁহাতি এই ওপেনার। ইশান্ত শর্মার বলে আবারও আউট হন সাদমান। পা না বাড়িয়ে ব্যাট-প্যাডের মাঝে বিশাল ফাঁক রেখে ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। মাশুল দেন বোল্ড হয়ে।
বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন প্রথম ইনিংসের সেরা বোলার মোহাম্মদ শামি। ডানহাতি এই পেসারের ভেতরে ঢোকা বল শাফল করে ফ্লিকের মতো করতে চেয়েছিলেন মুমিনুল, কিন্তু ব্যাটে খেলতে পারেননি। এলবিডব্লিউর সফল রিভিউয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ককে ফেরায় ভারত।
দেশের বাইরে সময়টা একদমই ভালো কাটছে না মুমিনুলের। এই টেস্টের আগে সবশেষ ১১ ইনিংসে করেছিলেন মোটে ৭৬ রান। প্রথম ইনিংসে ৩৭ রান করা এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান এবার ফিরলেন ৭ রানে।
নড়বড়ে মোহাম্মদ মিঠুন শামির স্কিড করা বল পুল করে ওড়াতে চেয়েছিলেন। টাইমিং করতে পারেননি, ব্যাটের ওপরের দিকে লেগে শর্ট মিড উইকেটে যায় সহজ ক্যাচ। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় তার এমন শটে আউট হওয়াটা বড় এক অপরাধ।
টানা তিন ওভারে উইকেট পেতে পারতেন শামি। তবে এই পেসারের বলে স্লিপে রোহিত শর্মাকে সহজ ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান মুশফিকুর রহিম।
মাহমুদউল্লাহ ও লিটন দাসের শুরুটা দুরকম; কিন্তু পরিণতি এক। দুই জনই উপহার দিয়ে আসেন উইকেট। শুরু থেকে ধুঁকতে থাকা মাহমুদউল্লাহ শামির বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ধরা পড়েন। ক্রিজে গিয়ে দারুণ কিছু শট খেলা লিটন হাতছাড়া বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে।
প্রথম ইনিংসে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ পাওয়া মেহেদী হাসান মিরাজ এবার ভালো একটা জুটি গড়েন মুশফিকের সঙ্গে। প্রথম সেশনে ৬০ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে যোগ করে ১৩১ রান।
তৃতীয় সেশনের শুরুতেই ফিরে যান মিরাজ। উমেশের ভেতরে ঢোকা বল তার কনুইয়ে লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে। এরপর আর কোনো জুটি গড়তে পারেনি বাংলাদেশ।
এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে টানা মুশফিক দ্রুত কিছু রানের চেষ্টায় ছিলেন। অশ্বিনের বলে চমৎকার ক্যাচে তাকে ফেরান চেতেশ্বর পুজারা। ৪ রানে জীবন পাওয়া মুশফিক ৭ চারে ফিরেন ৬৪ রান করে।
পরের ওভারে ইবাদত হোসেনকে ফিরিয়ে দলকে দারুণ এক জয় এনে দেন অশ্বিন।
৩১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ভারতের সেরা বোলার শামি। অশ্বিন ৩ উইকেট নেন ৪২ রানে।
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে জয়রথ ছুটছে ভারতের। কোহলির দল পেল টানা ষষ্ঠ জয়। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অভিষেক হলো ভুলে ভরা ম্যাচে বিব্রতকর এক পরাজয়ে।
কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে আগামী শুক্রবার শুরু হবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথমবারের মতো দিবা-রাত্রির টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫০
ভারত ১ম ইনিংস: ৪৯৩/৬ (ডি.)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ৬৯.২ ওভারে ২১৩ (সাদমান ৬, ইমরুল ৬, মুমিনুল ৯, মিঠুন ১৮, মুশফিক ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ১৫, লিটন ৩৫, মিরাজ ৩৮, তাইজুল ৬, আবু জায়েদ ৪, ইবাদত ১*; ইশান্ত ১১-৩-৩১-১, উমেশ ১৪-১-৫১-২, শামি ১৬-৭-৩১-৪, জাদেজা ১৪-২-৪৭-০ অশ্বিন ১৪.২-৬-৪২-৩)
ফল: ভারত ইনিংস ও ১৩০ রানে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচ সিরিজে ভারত ১-০ এ এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: মায়াঙ্ক আগারওয়াল