ভিডিও বার্তার পর সৌদি আরবে হোসনা এখন ‘নিরাপদে’
ভিডিও বার্তায় হবিগঞ্জের হোসনা আক্তারের আকুতি গণমাধ্যমে দেখে তাকে উদ্ধারে তৎপর হয়েছে সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস।
হোসনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে জানিয়ে জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের লেবার উইংয়ের কর্মকর্তা কে এম সালাহউদ্দিন সোমবার রাতে এক বার্তায় বলেছেন, ওই নারী তাদের জানিয়েছেন যে তিনি এখন নিরাপদে রয়েছেন।
গৃহকর্মী হোসনা রয়েছেন নাজরান শহরে, যা জেদ্দা থেকে ১ হাজার কিলোমিটার দূরে। তিনি এখন নাজারান শহরে সেইফ হোমে পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানান সালাউদ্দিন।
তিনি বলেন, তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে।
এর আগে পঞ্চগড়ের সুমি আক্তার সৌদি আরবে গৃহকর্মে গিয়ে নির্যাতিত হওয়ার বার্তা ভিডিওতে দিলে দূতাবাসের উদ্যোগে তাকে দেশে ফেরত আনা হয়।
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার হোসনা (২৪) তিন সপ্তাহ আগে সৌদি আরব যান মাসিক ২২ হাজার টাকা বেতনে। কয়েকদিন আগে কর্মস্থলে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে দেশে স্বামীকে ভিডিও বার্তা পাঠান তিনি।
তার স্বামী সেই ভিডিও প্রকাশ করলে তার ভিত্তিতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম খবর প্রকাশ করে।
জেদ্দা কনস্যুলেটের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদটি দেখে কনস্যুলেট ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়। প্রথমে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে হোসনার পাসপোর্ট নম্বর এবং তাকে পাঠানোতে যুক্ত বাংলাদেশি এজেন্সির নাম ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়।
“বাংলাদেশি এজেন্সির সাথে কথা বলে জানা যায়, উক্ত গৃহকর্মী সৌদি রিক্রুটিং অফিস ‘রুয়াদ নাজরান ( লাইসেন্স নং – ৩৯১৮৬১৮) এর মাধ্যমে সৌদি আরব আগমন করেন। তার নিকট হতে সৌদি এজেন্সির নাম ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়।”
তাৎক্ষণিকভাবে কনস্যুলেটের পক্ষ হতে নাজরান পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, এরপর কনস্যুলেট প্রতিনিধি সৌদি এজেন্সির সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন।
“উক্ত এজেন্সির সাথে কথা বলে জানা যায় যে, উক্ত গৃহকর্মী বর্তমানে পুলিশের নজরদারিতে এবং সেইফহোমে আছেন। তাকে বাংলাদেশে প্রেরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে মর্মে সৌদি এজেন্সি কনস্যুলেট প্রতিনিধিকে অবহিত করেন।”
সালাহউদ্দিন বলেন, “কনস্যুলেট প্রতিনিধি উক্ত গৃহকর্মীর সাথেও কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, বর্তমানে তিনি নিরাপদে আছেন। এ বিষয়ে কনস্যুলেটের ফলোআপ অব্যাহত আছে।”
এর আগে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, হোসনাকে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
গত ১৫ নভেম্বর সৌদি আরবের নাজরান এলাকা থেকেই দেশে ফিরে আসেন পঞ্চগড়ের সুমি। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তার হাতের উপর গরম তেল ঢেলে দেওয়ার পাশাপাশি নানাভাবে নির্যাতন চলত।
এ বছরের প্রথম ১০ মাসে সুমিসহ অন্তত ৯৬১ জন নারী সৌদি থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এই নারীদের বেশিরভাগই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের অভিযোগ নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে।
ভিডিও বার্তায় হোসনা তার স্বামীর উদ্দেশে বলেছিলেন, “আমার দালালে ভালা কথা কইয়া আমারে পাঠাইছে সৌদি। নিজরাল (নাজরান) এলাকায় আমি কাজ করি। আমি আইসা দেখি ভালা না। ওরা আমার উপর অত্যাচার করে। আমি বাক্কা দিন হইছে আছি।
“এখন এরার অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারি না দেইক্কা কইছি আমি যাইমু গা। এই কথা বলায় ওরা আরও বেশি অত্যাচার করে। আমি এজেন্সির অফিসে ফোন দিছি। অফিসের এরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি আর পারতাছি না। তোমরা যেভাবে পার আমারে বাঁচাও। এরা আমারে বাংলাদেশ পাঠাইতো চায় না। এরা আমারে ইতা করতাছে। আমারে ভালা কামের কথা কইয়া পাঠাইছে দালালে। আমারে ইতা করতাছে ওরা। আমি আর পারতাছি না সহ্য করতাম। তোমরা যেভাবে পার আমারে নেও।”
আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ নামের একটি এজেন্সির মাধ্যমে সৌদিতে যান হোসনা।
কয়েকদিন আগে স্ত্রীর ভিডিও বার্তা পাওয়ার পর ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ এজেন্সিতে গিয়ে বিরূপ আচরণ পেয়ে ভিডিওটি ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করান হোসনার স্বামী।