ভিক্ষায় ব্যবহারের জন্য শিশু চুরি, মারধরে চেহারা বিকৃত!
ভাঙারি ও কাগজ সংগ্রহ করে বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন সুমা। প্রতিদিনকার মতো দুই বছরের শিশু রাশিদা আক্তারকে নিয়ে পথে নামেন তিনি।
কাগজ খোঁজার ফাঁকেই শিশু রাশিদাকে হারিয়ে ফেলেন মা।
আসলে শিশু রাশিদা হারিয়ে যায়নি। তাকে চকলেটের লোভ দেখিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যান নীলা বেগম (৩০)। ভিক্ষায় ব্যবহারের জন্য আটকে রেখে মারধর করে এরই মধ্যে বিকৃত করে দেওয়া হয় শিশুটির চেহারা। অবশেষে পুলিশের তৎপরতায় দীর্ঘ ছয়দিন পর শিশু রাশিদাকে উদ্ধার সম্ভব হয়। গ্রেফতার করা হয় অপহরণে জড়িত নীলা বেগমসহ ১০ বছরের এক মেয়েকে।
শনিবার (০১ মে) রাতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন কদমতলী এলাকা থেকে শিশুটিকে উদ্ধারসহ দুইজনকে গ্রেফতার করে বংশাল থানা পুলিশ। পরে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে পুলিশ।
বংশাল থানা পুলিশ জানায়, মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা সুমা (২৫) রাস্তা থেকে ভাঙারি ও কাগজ সংগ্রহ করে তা বিক্রির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ২৫ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে কাগজ ও ভাঙারি খোঁজার জন্য বংশালে যান। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুরাতন বংশাল রোডের মাথায় মেয়ে রাশিদা আক্তারকে (২) বসিয়ে রেখে কাগজ সংগ্রহ করছিলেন সুমা। কিছুক্ষণ পরে দেখতে পান তার মেয়ে আর সেখানে নেই।
আশেপাশে খুঁজে তাকে না পেয়ে বংশাল থানায় একটি জিডি (নম্বর-১১৬১) করেন সুমা। ওই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে শিশু রাশিদাকে খুঁজে পেতে চার সদস্যের টিম গঠন করে পুলিশ। তদন্তে ঘটনাস্থলের সাসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুইজনকে শনাক্ত করা হয়।
এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে শনিবার (০১ মে) রাত সাড়ে আটটার দিকে কদমতলীর শহিদনগর এলাকা থেকে শিশু রাশিদাকে উদ্ধারসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানান, আসামি নীলা বেগম ও আরেকজন পরস্পরের যোগসাজসে শিশু রাশিদা আক্তারকে চকলেট খাইয়ে কথাবার্তার মাধ্যমে কৌশলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল শিশু রাশিদাকে ভিক্ষাবৃত্তিতে ব্যবহার। আর সেজন্য মারধর করে শিশুটির চেহারা বিকৃত করে দেওয়া হচ্ছিল।
ওসি বলেন, উদ্ধার শিশুটির শারীরিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পুলিশের তৎপরতায় অবশেষে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় মায়ের কোলে।
এদিকে, এ ঘটনায় জড়িত দুইজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ওসি শাহীন ফকির।