‘ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সূচিত হয় রাষ্ট্র গঠনের লড়াই’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল ‘বাংলাদেশ’ নামক জাতি রাষ্ট্র গঠনের লড়াই যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ, স্বাধীনভাবে ভাষাচর্চার অনুকূল পরিবেশ। বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও সৃজনে তিনি কতটা সচেতন ও উদ্যোগী ছিলেন, তাঁর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভাষণসমূহ বিশ্লেষণ করলেই তা অনুধাবন করা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ এর ৩০ বছর পূর্তিতে তিনি বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
সরকার দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ, নৈতিক মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন আগামী প্রজন্ম এবং একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে দেশের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছি। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। আমরা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরেছি, নারী শিক্ষা প্রসারে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে উৎসবমুখর পরিবেশে আমরা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করছি। ২০১৭ সাল হতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য ব্রেইল পাঠ্যপুস্তকসহ চাকমা, মারমা, গারো, ত্রিপুরা ও সাদারি এই ৫টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃভাষায় রচিত পাঠ্যপুস্তক বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা নতুন নতুন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা স্থাপন করছি। প্রতিটি জেলায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শত শত বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এমপিওভুক্ত করেছি এবং এ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। শিক্ষকগণের পদমর্যাদা ও বেতন বৃদ্ধি করার পাশাপাশি তাঁদের মানোন্নয়নে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র নয় মাসেই আমাদের একটি সংবিধান উপহার দিয়েছেন। সেই সংবিধানের ১৭নং অনুচ্ছেদে সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য রাষ্ট্রকর্তৃক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের উল্লেখ করেছেন। তিনি ১৯৭২ সালে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদাকে প্রধান করে একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। জাতির পিতা সদ্য স্বাধীন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করেন, প্রাথমিক শিক্ষাকে সর্বজনীন, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করেন এবং ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেন।
সরকারপ্রধান বলেন, আধুনিক বিশ্বে ভাষাকে অত্যন্ত কার্যকর সম্পদ বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে ভাষা গবেষণা ও চর্চার মধ্য দিয়ে ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে আসছে। বাংলা ভাষাকে প্রযুক্তি ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে সরকার ধারাবাহিকভাবে কাজ করে চলছে। ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণ এক্ষেত্রে নানাভাবে ভূমিকা রেখেছেন এবং ভবিষ্যতেও এটি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে আমরা সক্ষম হবো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ এর ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য এবং প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করেন।