ভারত থেকে দুই মাসে এসেছে ৪৪৫ জন: বিজিবি প্রধান
বিদায়ী বছরে অবৈধভাবে ভারত সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়ার সময় হাজারখানেক মানুষকে আটক করা হয়েছে; যাদের মধ্যে ৪৪৫ জন এসেছেন দেশটির নাগরিকত্ব আইন সংশোধন হওয়ার পর দুই মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর)।
বৃহস্পতিবার সীমান্তরক্ষা বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম পিলখানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
মেজর জেনারেল সাফিনুল বলেন, “গত এক বছরে আমরা ৬০৬ জন পুরুষ, ২৫৮ জন নারী, ১৩৫ জন শিশু এবং তিনজন পাচারকারীকে আটক করেছি। এদের কেউ অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকছিল এবং কেউ অবৈধভাবে ভারতে যাচ্ছিল।
“এনআরসির পরে নভেম্বর মাসে ৩১২ জন এবং ডিসেম্বরে ১৩৩ জন দেশে এসেছে। এরা মূলত ঝিনাইদহ, মহেশপুর এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে এসেছে।এরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে আমরা তা নিশ্চিত হয়েছি।”
নাগরিকত্ব নিশ্চিত হওয়ার পর তাদেরকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান মেজর জেনারেল সাফিনুল।
বিজিবি প্রধানের দাবি, এদের ফেরত আসার সঙ্গে ভারতের নাগরিকপঞ্জি বা নাগরিকত্ব আইনের কোনো সম্পর্ক নেই।
গত ২৫-৩০ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকের বিস্তারিত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।
মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে বিজিবি প্রধান বলেন, “বিজিবি সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে আছে। এখানে কেউই অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করতে পারবে না।”গত অগাস্টে ভারতের আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ হলে দেখা যায়, রাজ্যটির বাসিন্দা ১৯ লাখ মানুষের নাম সেখানে স্থান পায়নি। বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে আলোচনা ছিল ভারতীয় গণমাধ্যমে।
এই পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারতীয় সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের ঘটনায় মানুষজনের আটক হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
আসামে নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি নিয়ে বিতর্কের পর ভারত সরকার ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন সংশোধন (সিএএ) করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যাওয়া হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ ও পার্সি শরণার্থীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করে।
এরপর থেকেই সহিংস বিক্ষোভ চলছে দেশটির বিভিন্ন অংশে। ওই অস্থিরতার মধ্যে ডিসেম্বরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত সফর বাতিল করা হয়।
তবে এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে বরাবরই আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, এগুলো একান্তই তাদের নিজস্ব বিষয়, এ নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই।
পশ্চিমাঞ্চলে কিছু বাড়িঘর রয়েছে যেগুলো দুই দেশের সীমান্তের মধ্যে পড়েছে।
“সেখানকার বাসিন্দাদের ৪৮ বা ৭২ ঘণ্টার জন্য পাস দেওয়ার একটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, যেন দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকরা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারেন,” বলেন বিজিবি মহাপরিচালক।
সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহত হওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ বিষয় নিয়ে সম্মেলনে বিএসএফ মহাপরিচালকের সাথে কথা হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আরও সতর্ক হবেন।”চোরাকারবারিদের নিত্যনতুন কৌশল মোকাবেলাকে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিজিবি মহাপরিচালক।
“সীমান্ত এলাকায় সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে, বিজিবিতে আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজিত হচ্ছে। পুরোপুরি সফল হলে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে।”
বিজিবিতে স্পিড বোট, হেলিকপ্টার সংযোজিত হচ্ছে এবং অস্ত্র কেনার পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমার সীমান্তে কিছু আধুনিক অস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা আছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপও বিজিবির আধুনিকায়ন পরিকল্পনার সাথে যুক্ত।
বাহিনীতে স্পিড বোট যুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সাফিনুল বলেন, “নাফ নদীতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী মেশিনগান নিয়ে টহল দেয়, আর আমরা সাধারণ নৌকা নিয়ে টহল দেই।”
মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার কাজ অগ্রাধিকারভিত্তিতে চলছে বলে জানান তিনি।