November 25, 2024
আন্তর্জাতিক

ভারতে কৃষক আন্দোলন : ফেক নিউজের কবলে ওবামা-ট্রুডো

কৃষি আইন নিয়ে ভারতের কৃষকদের চলমান আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। সরকারের সাথে কয়েকদফা আলোচনা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। ভারত বনধের ডাক দিয়ে রাজধানী দিল্লি অবরোধের জন্য সমবেত হয়েছেন লাখ লাখ কৃষক। দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান তাদের। সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হলেও কৃষকরা তাতে আস্থা রাখতে পারছেন না।

এদিকে কৃষকদের এই আন্দোলন নিয়ে ডানা মেলছে নানা ধরনের গুজব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে গুজব ও ফেক নিউজ (ভুয়া নিউজ)। এসব গুজব ও ফেক নিউজে বিভ্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এসব ফেক নিউজে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসেডিন্টে বারাক ওবামা, কানাডার প্রধানন্ত্রীসহ ভারতের প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদদের জড়ানো হচ্ছে। বিবিসি এ ধরনের কিছু ফেক নিউজের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেছে।

বারাক ওবামা
বিবিসি প্রথমে তুলে ধরেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসেডিন্টে বারাক ওবামার নামে ছড়ানো একটি টুইটার পোস্টের কথা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বারাক ওবামার টুইটার পেজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তার একটি ছবি শেয়ার দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালে বারাক ওবামা যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন ছবিটি তখনকার। ছবিটি সত্যিই তোলা হয়েছিল সেসময়। কিন্তু ছবির ক্যাপসন দেয়া হয়েছে মিথ্যা।

india_farmer-4.jpg

ক্যাপসনে বলা হয়েছে, ‘নরেন্দ্র মোদির সাথে হাত মিলিয়ে আজ আমি লজ্জিত।’ কিন্তু কথাটি মিথ্যা। আর এই টুইটার একাউন্টটিও ফেক। ওবামার আসল একাউন্টটি এডিট করে এটি তৈরি করা হয়েছে। কাঁচা হাতে লেখা হয়েছে ক্যাপসনটি, যাতে বানান ভুলের মতো ঘটনাও ঘটেছে।

বারাক ওবামার টুইটার একাউন্ট চেক করে দেখা গেছে, গত মাসে ভারতে কৃষক আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে তিনি টুইটারে কিছু লেখেননি।

জাস্টিন ট্রুডো
ভারতের কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। এ নিয়ে বিতর্কের মুখেও পড়েছেন তিনি। আর এ কারণেই হয়তো তাকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা সহজ হয়েছে।

কিছু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছিবি ছড়িয়ে দিয়েছেন। যাতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো একদল শিখ সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে বসে সংহতি জানাচ্ছেন। ভারতে আন্দোলনরত কৃষকদের একটা বড় অংশ পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায় থেকে আসা। আর এ কারণেই এই ছবির প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে।

india_farmer-4.jpg

কিন্তু অুনসন্ধানে জানা যায়, এই ছবিটি ভুল তথ্য দিচ্ছে। ছবিটি অন্তত পাঁচ বছর আগে তোলা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও তা নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জাস্টিন ট্রুডো এখন হালকা দাঁড়ি রেখেছেন। কিন্তু যে ছবি ছড়ানো হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে তার মুখে দাঁড়ি নেই।

ছবিটি ২০১৫ সালে তোলা। ওই সময়ে কানাডার শিখদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল ওটোয়া ভ্রমণে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো।

এই দুই বিখ্যাত ব্যক্তি ছাড়াও ফেক নিউজে জড়ানো হচ্ছে ভারতের রাজনৈতিক নেতাসহ ধনী ব্যক্তিদের। এর মধ্যে রয়েছেন-

রাজনাথ সিং
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন রাজনাথ সিং। বলা হচ্ছে, বিজেপির মন্ত্রী হয়েও কৃষকদের পক্ষ নিচ্ছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ একটি ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে এই বক্তব্য জোড়ালো করা হচ্ছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তিনি বলছেন, ‘আমি যদি আগে থেকে এই আন্দোলনের বিষয়ে জানতাম, তাহলে ওই দিন থেকেই আমি এখানে আসতাম এবং সমর্থন জানাতাম।’

india_farmer-4.jpg

এই ভিডিও শেয়ার দিয়ে বলা হচ্ছে, ‘কৃষকদের আন্দোলন নিয়ে বিজেপিতে বিভাজন দেখা দিয়েছে।’

কিন্তু গুগলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভিডিওটি ২০১৩ সালের যখন রাজনাথ সিংয়ের বিজেপি ছিল বিরোধীদলে। সেসময় ক্ষমতাশীন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আন্দোলতরত কৃষকদের সমর্থন জানিয়েছিলেন তিনি। কৃষকদের স্থায়ী আয়ের ব্যবস্থা করার জন্য তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি, যা এখনো তার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে রয়েছে।

এছাড়া সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং কৃষক পরিবারের সন্তান রাজনাথ সিং গত অক্টোবরে বলেন, ‘বর্তমান সরকার কৃষকদের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করবে না।’

india_farmer-4.jpg

পাঞ্জাবের শীর্ষ নেতারা কি কৃষকদের বিপক্ষে কাজ করছেন

গুজব ছড়ানো হয়েছে কংগ্রেসের রাজনীতিবিদ অমরিন্দর সিং ও বিজনেস টাইকুন মুখেশ আম্বানিকে নিয়ে। এই দুজনের একটি পুরনো ছবিকে নতুন বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, কৃষকদের ভারত বনধের ডাক দেয়ার আগের দিনই তারা সাক্ষাৎ করেছেন।

এই ছবি দিয়ে বলা হচ্ছে, কংগ্রেস এক হাতে কৃষকদের আন্দোলনকে সমর্থন করছে, আবার আম্বানির মতো শিল্পপতিদের সাথে অন্য হাতে মেলাচ্ছে। এ কোন ধরনের রাজনীতি এর মানে হলো অমরিন্দর সিং একদিকে কৃষকদের সমর্থন করছেন, আবার অন্যদিকে বেসরকারি করপোরেশনের স্বার্থে কাজ করছেন।

কিন্তু এই ছবিটি ২০১৭ সালে তোলা। আবার অমরিন্দর সিং এখনো কৃষকদের পক্ষেই কথা বলছেন। তাই এই ছবি ছড়িয়ে ভুল বার্তা দেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *