ভারতে করোনার প্রাণঘাতী দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী ‘ডাবল মিউট্যান্ট’
ভারত জানিয়েছে গত মার্চ মাসে করোনাভাইরাসের যে ‘ডাবল মিউট্যান্ট’ ধরনের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল, সেটির কারণেই দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ অনেক বেশি প্রাণঘাতী হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্ট ভারতের কয়েকটি রাজ্যে অনেক বেশি সংখ্যায় পাওয়া গেছে।
তবে ভারতের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ডাবল মিউট্যান্টের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সম্পর্ক পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
একটি ভাইরাসের মধ্যে যখন দুই ধরণের পরিবর্তন একত্রে মিলিত হয়, তখন সেটিকে ডাবল মিউট্যান্ট বলা হয়।
ভারতের একজন শীর্ষ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেছেন, দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী।
এক সংবাদ সম্মেলনে কে বিজয় রাঘবন স্বীকার করেছেন যে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ এতোটা ভয়ঙ্কর হবে, সেটি বিশেষজ্ঞরা অনুমান করতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে রাঘবন বলেন, ‘ভাইরাস বেশি মাত্রায় সংক্রমিত হবার ফলে তৃতীয় ঢেউ অবশ্যম্ভাবী।’ তবে তৃতীয় ঢেউ কখন আসতে পারে সে বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে ভারতের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জায়গা হচ্ছে না। এছাড়া তীব্র অক্সিজেন সংকটের পাশাপাশি মরদেহ সৎকার নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে।
সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য কয়েকটি রাজ্যে স্থানীয়ভাবে লকডাউন আরোপ করা হলেও দেশজুড়ে লকডাউনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।
ডাবল মিউট্যান্ট ধরনটি কোথায় পাওয়া গেছে?
ভারতে ১৩ হাজার নমুনা সিকোয়েন্স করে আটটি রাজ্যে সাড়ে তিন হাজারের বেশি নমুনায় উদ্বেগজনক ডাবল মিউট্যান্ট ধরন পাওয়া গেছে।
গত এক মাসের বেশি সময় যাবৎ সরকার বলছে, বি.১.৬১৭ ধরনটি বর্তমান দ্বিতীয় ঢেউয়ের সাথে সম্পর্কিত নয়।
ভারতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সাথে ব্রিটিশ, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিল মিউটেশনের কোন সম্পর্ক নেই বলেও উল্লেখ করেন কর্মকর্তারা।
ভাইরোলজিস্ট শহীদ জামিল এর আগে বলেছিলেন, ভাইরাস মিউটেশনের দিকে ভারত অনেক দেরিতে নজর দেয়া শুরু করেছে। ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে যথাযথভাবে নমুনা সিকোয়েসিংয়ের প্রতি জোর দিয়েছে।
জামিল বলেন, ‘ভারতে যত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, তার মাত্র এক শতাংশ সিকোয়েন্স করা হয়। অন্যদিকে সংক্রমণের সর্বোচ্চ সময়ে ব্রিটেনে সিকোয়েন্স করা হয়েছিল ৫-৬ শতাংশ।’
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার যদিও এখন স্বীকার করছে যে, সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সাথে ডাবল মিউট্যান্ট ধরনের সম্পর্ক আছে। তবে একই সঙ্গে তারা এ কথাও বলছে যে, দুটো বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের সুজিত সিং বলেন, ‘রোগের কারণ এবং রোগীদের চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ- এ দুটো বিষয়ের মধ্যে পুরোপুরি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই দুটো বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক ছাড়া সংক্রমণের বিস্তার সম্পর্কে সরাসরি সংযোগ প্রতিষ্ঠা করা কঠিন।’
এজন্য বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নিয়ম-কানুন মেনে চলার পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।