ভারতের নামীদামি ১০ কোম্পানির মধুতে ভেজাল
ডাবর, পতঞ্জলি, বৈদ্যনাথ, জান্ডুসহ ভারতের অন্তত ১০টি নামীদামি প্রতিষ্ঠানের মধুতে ভেজাল পাওয়া গেছে। তাদের বাজারজাত করা মধুতে ভেজাল হিসেবে শুধু চিনির সিরাপ নয়, চাল বা ভুট্টা থেকে রাসায়নিক উপায়ে তৈরি মিষ্টি সিরাপও মেশানো হচ্ছে। বৃহস্পতিবার এসব তথ্য জানিয়েছে আনন্দবাজার পত্রিকা, দ্য হিন্দুর মতো প্রভাবশালী ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
বুধবার দিল্লির পরিবেশ গবেষণা সংস্থা ‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ (সিএসই) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ভারতের বেশিরভাগ নামী প্রতিষ্ঠানের মধুতেই ভেজাল রয়েছে। অবশ্য দেশটিতে ভেজাল মধু পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০১০ সালে সিএসই’র তদন্তে বলা হয়েছিল, সেখানে মধুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক পাওয়া গেছে।
বুধবার সিএসই জানিয়েছে, ‘ফুড সেফটি স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড সেফটি অথোরিটি অব ইন্ডিয়া’-এর নির্দেশিকায় মধুতে আখ থেকে তৈরি চিনি মেশানো হয়েছে কি না, তা শনাক্তের কথা থাকলেও ‘ট্রেস মেকার ফর রাইস সিরাপ’ (টিএমআর) এবং ‘নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজ়োন্যান্স’ (এনএমআর)-এর মতো উন্নত পরীক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে।
সিএসইর মহাপরিচালক সুনীতা নারায়ণ জানান, ভারতে পাস করলেও সম্প্রতি জার্মানির একটি ল্যাবরেটরিতে করা পরীক্ষাতে ফেল করেছে ভেষজপণ্য বাজারজাতকারী অনেকগুলো নামী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান।
দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, জার্মানিতে ১৩টি প্রতিষ্ঠানের মধুর নমুনা পাঠিয়েছিল সিএসই। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধুতেই ভেজাল থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, মূলত চীন থেকে মিষ্টি রাসায়নিক সিরাপ ভারতে সুক্রোজ এবং ফ্রুক্টোজ নামে আমদানি করা হয়। তবে উত্তরাখণ্ডেও সেই সিরাপ তৈরির কারখানা রয়েছে।
ভারতের মধ্যে যেসব নমুনা পরীক্ষায় পাস করছে সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি খাঁটি মধুর সঙ্গে চীন থেকে আমদানি করা ওই মিষ্টি সিরাপ বিভিন্ন হারে মিশিয়ে ন্যাশনাল ডেয়ারি ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের ল্যাবে পাঠিয়েছিল সিএসই। যেসব নমুনায় ৫০ শতাংশ সিরাপের ভেজাল রয়েছে, পরীক্ষায় সেগুলোও পাস করে গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
সুনীতা জানান, আলিবাবার মতো অনলাইন পণ্য বিক্রির ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন দেখে তারা ওই মিষ্টি সিরাপ চেয়ে কয়েকটি চীনা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তারা সহজেই সেগুলো ভারতে পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। দেখা যায়, একটি প্রতিষ্ঠান হংকং থেকে রঙ রপ্তানির কথা বলে এই সিরাপ পাঠাচ্ছে। আরেকটি প্রতিষ্ঠান সুক্রোজ নামে সিরাপ পাঠাচ্ছে।
পরে জানা যায়, ভারতের উত্তরাখণ্ডেই চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি কারখানা খোলা হয়েছে। সেখানে মাত্র ৬৮ রুপি কেজি দরে সিরাপ বেচাকেনা হচ্ছে।
সিএসইর মহাপরিচালক বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিতে প্রচুর মানুষ মধু খাচ্ছে। কিন্তু এই ভেজাল মধু উপকারের বদলে তাদের ক্ষতিই করবে।
তবে স্বাভাবিকভাবেই মধুতে ভেজাল মেশানোর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ইমামি বলেছে, তারা এফএসএসএআইয়ের বেঁধে দেওয়া নিয়ম অনুসারেই মধু প্রস্তুত করে।
ডাবর বলছে, তাদের মধু সম্পূর্ণ খাঁটি ও দেশীয় বস্তুতে তৈরি। তাদের কোনও কিছু চীন থেকে আমদানি করা হয় না। দেশের সব নিয়ম মানার পাশাপাশি নিজস্বভাবে এনএমআর টেস্ট করা হয় বলেও দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
আর, সিএসই’র এই প্রতিবেদনের নেপথ্যে জার্মান প্রযুক্তি বিক্রি করার ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে উল্টো অভিযোগ করেছে পতঞ্জলি। তাদের মতে, বিশ্ববাজারে ভারতীয় মধুর বদনাম করতেই এই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।