December 22, 2024
জাতীয়

ভারতের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সরকারের ভূমিকা রাষ্ট্রবিরোধী : বিএনপি

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ভারতের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ‘নির্বিকার’ ভূমিকার সমালোচনা করে বিএনপি বলেছে, এই অবস্থান ‘রাষ্ট্রবিরোধী’। রবিবার ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভারতের পার্লামেন্টে সদ্য পাস হওয়া সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধন আইনকে অগণতান্ত্রিক, বৈষম্যমূলক, আগংবিধানিক, মানবতাবিরোধী আখ্যায়িত করে সারা ভারতে এখন প্রতিবাদ চলছে। কোথাও কোথাও এই প্রতিবাদ সহিংসতার রূপ নিয়েছে। কেবল সংখ্যালঘু মুসলিম স¤প্রদায়কে টার্গেট করেই এই আইন প্রণীত হয়েছে বলে আজ জনমনে বিশ্বাস স্থাপিত হয়েছে।

সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আসামের গোয়াল পাড়ায় ইতোমধ্যে ই-ডিটেশন সেন্টার নির্মাণ করা হয়েছে। সারা ভারতে আরও অনেক ডিটেনশন সেন্টার নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

এমনিতেই ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী নিয়ে বাংলাদেশ ভারাক্রান্ত। এর উপর এনআরসির উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার তাদের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতির প্রমাণ হিসেবে যেভাবে নির্বিকার রয়েছে, তা স্পষ্টতই আমাদের জনগণ, সার্বভৌমত্ব ও রাষ্ট্র বিরোধী অবস্থান।

একে ‘ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে আওয়ামী লীগ সরকার সাফাই দিচ্ছে অভিযোগ তুলে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার যতই এনআরসিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে সাফাই গাইতে থাকুক না কেন, স¤প্রতি বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সন্তর্পণে এবং কখনওবা খোলামেলাভাবে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পুশইন চলছে। যার বিরুদ্ধে খোদ ভারতেই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের পাশাপাশি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রকৃতপক্ষে মিয়ানমার যেমন রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গাদের স্টেটলেস করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে, একইভাবে নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি জটিলতায় সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের স্টেটলেস ঘোষণা করে জোর করে বাংলাদেশে পুশইন করার প্রক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করছি। বাস্তবিক অর্থে এনআরসি ইস্যুতে মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং ভারত থেকে সীমান্ত দিয়ে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেওয়া সংখ্যালঘু ভারতীয় মুসলিমদের মধ্যে কোনো মৌলিক ব্যবধান নাই।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমারের বক্তব্যে বিএনপি আমলে বাংলাদেশে হিন্দু স¤প্রদায়ের উপর নির্যাতনের যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তার নিন্দা ও তা প্রত্যাহারেরও দাবি জানান ফখরুল।

তিনি বলেন, হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও বিএনপির কাঁধে বন্দুক রেখে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সম্পূর্ণ শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে এই অঞ্চলের রাজনীতিকে একটি অসুস্থ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

এদেশের বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের কথা এড়িয়ে গিয়ে ইচ্ছাপ্রণোদিতভাবে বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে বিষোদগার করায় এটি প্রমাণিত হয় যে, বর্তমান ভারত সরকার তার সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য বাংলাদেশের জনগণের পরিবর্তে নতজানু আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বেশি আগ্রহী।

অমিত শাহ ও রবীশ কুমারের বক্তব্যকে  ‘অসত্য, অপব্যাখ্যামূলক, একপাক্ষিক, বৈষম্যমূলক, বিভ্রান্তিকর এবং চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ’ দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একই সঙ্গে আমরা আশা করি, দুই দেশের জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে বাংলাদেশ ও বিএনপি সম্পর্কে ভারতীয় পার্লামেন্টে যে অসত্য বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, ভারত সরকার তা অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেবেন এবং ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার লক্ষ্যে এই ধরনের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য প্রদানে বিরত থাকবেন।

সংখ্যালঘুদের বিষয়ে বাংলাদেশ ও বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে একটি সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এক কথায় বলতে গেলে বিএনপি সব আমলেই সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি অটুট রাখতে সফল হয়েছে।

লোকসভায় অমিত শাহের বক্তব্য প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সারাবিশ্বের দৃষ্টি যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও এনআরসি উদ্ভূত চলমান সংঘাতের উপর নিবদ্ধ, যখন জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে শুরু করে প্রভাবশালী দেশগুলো ভারতের বির্তকিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানাচ্ছে, ঠিক এমন সময়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি সংখ্যালঘু নির্যাতনকারী রাষ্ট্রের লেবেল এঁটে দেওয়ার একটি সুদূরপ্রসারী ভয়াবহ প্রভাব রয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

এই মিথ্যাচারের কারণে একদিকে আন্তর্জাতিক পরিমÐলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি শুধু ক্ষুন্নই নয়, বরং ভবিষ্যতে এটি বাংলাদেশ ও তার নাগরিকদের নিরাপত্তাজনিত উৎকণ্ঠার কারণও হয়ে উঠতে পারে। কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশের নাগরিক জনৈকা প্রিয়া সাহা নিজ দেশে সংখ্যালঘু নিপীড়নের যে নালিশ করছে যা, বাংলাদেশের আপামর জনগনকে বিক্ষুব্ধ করেছে। প্রধানমন্ত্রী যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তার সব কিছুর সাথেই ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে একটি যোগসূত্র পাওয়া যায়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *