September 13, 2025
আন্তর্জাতিক

ভারতকে চাপে রাখতে সম্পর্ক জোরালো করছে চীন-পাকিস্তান

কাশ্মীরের অবকাঠামো উন্নয়নে চীন ও পাকিস্তান তাদের সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে। এই দুই দেশের সঙ্গেই সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে ভারতের। চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের অংশ হিসেবে বুধবার ওই অঞ্চলের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে ইসলামাবাদ ৬ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের অনুমোদন দিয়েছে।

এ ছাড়া চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের কাসগর থেকে ইসলামাবাদ পর্যন্ত বৃহত্তর সড়ক যোগাযোগের অংশ হিসেবে এ সপ্তাহেই চীন ঠাকোট থেকে হেভেলিয়ান পর্যন্ত ১১৭ কিলোমিটার সড়ক খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এ সড়কটি জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের দাবিকৃত অঞ্চলের পাশ দিয়ে চলাচল করে।

সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হলে তথাকথিত বন্ধুত্বের এ মহাসড়কটি লাদাখের (কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন পৃথক প্রশাসনিক অঞ্চল) এমন এলাকা দিয়ে যাবে যা নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ উভয়েই নিজেদের বলে দাবি করে। সড়ক খুলে দেওয়ার বিষয়টি চীন ও পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ বহন করে।

চীনের সাংহাই মিউনিসিপ্যাল সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ ওয়াং ডেহুয়া বলেন, চীন ও পাকিস্তানের প্রকল্পগুলো নিয়ে ভারত বেশ চিন্তিত। এ অঞ্চলের কৌশলগত অবস্থান যে গুরুত্বপূর্ণ, তা এই প্রকল্পটি দেখিয়ে দিচ্ছে।

ওয়াং বলেন, অতীতে কাশ্মীর ইস্যুটি ভারত, পাকিস্তান ও চীনের ত্রিমুখী সম্পর্কের কেন্দ্রে ছিল না, কিন্তু বর্তমানে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জন্য বেশ কিছু জটিল বিষয় রয়েছে বিশেষ করে লাদাখ গঠনের ক্ষেত্রে।

চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গোটা কাশ্মীরকে অন্তভূর্ক্ত করে দেশের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেছেন। যেখানে জম্মু ও কাশ্মীর অবৈধভাবে ভারত দখল করছে বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। অবশ্য দিল্লি পাকিস্তানের সদ্যপ্রকাশিত এ মানচিত্র রাজনৈতিকভাবে অযৈাক্তিক বলে আখ্যা দিয়েছে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার কাশ্মীর একপক্ষীয় কোনোর পরিবর্তন অবৈধ ও অকার্যকর বলে জানিয়েছে। সীমান্ত নিয়ে বিরোধের জেরে জুনে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাদের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় জওয়ান প্রাণ হারান। এছাড়া জম্মু কাশ্মীরে খন্ডযুদ্ধে ভারত ও পাকিস্তানের সৈন্য মারা গেছে।

সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সিনিয়র ফেলো জেমস ডরসে বলেন, সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের উত্তেজনার ফলে বেইজিং-ইসলামাবাদ সম্পর্ক আরও সংহত অবস্থানে রয়েছে। তবে চীন যুদ্ধের দামামা বাজাবে না বলেই মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, এটি চীনের জন্য ভাল-মন্দ উভয় পরিণতি বয়ে আনতে পারে। পাকিস্তানে চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে।

সাংহাইয়ের ফুডান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক ডু ইউক্যাং বলেন, চীনের অবস্থান ছিল ভারত ও পাকিস্তান নিজেরা বিরাজমান মতপার্থক্য দূর করতে সমঝোতা করবে এবং চীন জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে উদ্বেগ জানাবে।

তিনি আরও বলেন, যদি ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ায়, তাহলে তা আঞ্চলিক শান্তিতে প্রভাব ফেলবে—যা চীনের স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে। চীন তার সীমান্তে রক্তপাত চায় না। তাই দেশটি সংঘাতের ঝুকির দিকে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করবে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বলেছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে জম্মু কাশ্মীর নিয়ে চীনের আলোচনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে তারা। তিনি বলেন ‘আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীনের হস্তক্ষেপ নাকচ করে দিয়েছি এবং এ ধরনের অকার্যকর প্রচেষ্টা থেকে যথাযথ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি’।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *