December 22, 2024
আন্তর্জাতিক

ভাগ্যবদলে সাগরপথে যাত্রা, সলিল সমাধি হাজারো স্বপ্নের

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

একটু ভালো থাকার আশায়, জীবনকে আরেকটু উন্নত করতে কিংবা পরিবারের মানুষগুলোকে ভালো রাখতে বিশ্বের বহু মানুষই ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় পাড়ি জমাতে চেষ্টা করেন ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে। তবে বেশিরভাগই শেষমেষ তাদের কাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন না। কেউ হয়ত প্রাণ হারায় পথেই, আবার জীবিতদেরও অনুপ্রবেশের দায়ে আটকে রাখা হয় বিভিন্ন দেশের বন্দী শিবিরে।

এমনই অনেক অভিবাসী বন্দী শিবিরের মধ্যে অন্যতম লিবিয়ার বন্দী শিবির। এখানেও আটকে রয়েছে কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী। এখানে আটকে থাকা অভিবাসীরা মূলত লিবিয়া হয়ে ইউরোপে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পথিমধ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এবং যথাযথ অনুমোদন না থাকায় তারা আটকে রয়েছেন লিবিয়ার এ বন্দী শিবিরে।

আটকে থাকা এসব অভিবাসীদের রাজনৈতিক ঝামেলা মনে করে বিভিন্ন দেশ। তারা যে দেশে আশ্রয় নিতে এতদূর পাড়ি দিয়েছেন, সে দেশও তাদের ঝামেলার চোখেই দেখে। অন্যদিকে তাদের নিজ দেশও তখন তাদের ফেরৎ নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে তারা আটকে থাকেন বন্দীশালায়।

স¤প্রতি প্রকাশিত জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হয় প্রায় সাত কোটি ১০ লাখ মানুষকে। এসব মানুষ বাংলাদেশ, তুরস্ক, উগান্ডা ও পেরুসহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে রয়েছে। ২০১৯ সালেও অনেকেই বিপজ্জনকভাবে ইউরোপে পাড়ি জমানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে এখন লিবিয়া কিংবা ত্রিপোলির মতো আরও বিভিন্ন দেশের বন্দী শিবিরে আটকে আছেন।

তাদের রাখা বন্দী শিবিরগুলোর পরিবেশও খুব নোংরা। আর এ পরিবেশেই থাকতে হচ্ছে হাজারো নারী-শিশুকে। আবার রাজনৈতিক সহিংসতায় প্রাণও হারাচ্ছেন তারা।

সর্বশেষ ২ জুলাই লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির প্র্বূাঞ্চলীয় শহরে অভিবাসীদের একটি বন্দী শিবিরে বিমান হামলায় বাংলাদেশিসহ অন্তত ৪০ অভিবাসী প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও ৮০ জন। এসব অভিবাসীদের নিয়ে ভাবছে ইউরোপের অনেক দেশই। তবে এসব মানুষের অভিবাসনের বিষয়ে একমতে আসেনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আওতাধীন ২৮ দেশ।

তবে কিছু দেশ রয়েছে যারা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে থাকে। এদের মধ্যে তুরস্ক, পাকিস্তান, উগান্ডা ও জার্মানি অন্যতম। এ দেশগুলোই বেশিসংখ্যক শরণার্থীদের নিজ দেশে আশ্রয় দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, শুক্রবার (৫ জুলাই) অভিবাসীদের পক্ষে ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এক অনুরোধ রাখেন লিবিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফাতহি বাশাঘা। তিনি ইউরোপের উদ্দেশে বলেন, এসব অভিবাসীদের প্রতিহত করে নয়, বরং তাদের প্রবেশের সুযোগ দিয়ে তাদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করুন।

এছাড়া সা¤প্রতিক সময়ে লিবিয়ার অভিবাসী শিবিরে বিমান হামলা ছাড়াও লিবিয়া উপকূলে অভিবাসী বোঝাই দুইটি নৌকা ডুবে নিখোঁজ রয়েছেন ১৪০ জন। প্রাণঝুঁকি নিয়েই সাগরপথ পাড়ি দিতে হয় অভিবাসীদের।

একই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে আগ্রহী অভিবাসীদেরও। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। মূলত ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অভিবাসীদের ব্যাপারে বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

সর্বশেষ ২৪ জুন মেক্সিকোর মাতামোরোসের তামালিপাস রাজ্যের রিও গ্রান্দে নদীর কাছে এল সালভেদরের অভিবাসী স্কার আলবের্তো মারটিনেজ রামিরেজ ও তার ২৩ মাস বয়সী মেয়ে ভ্যালেরিয়ার মৃত্যুর ছবি প্রকাশিত হলে তা নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাতে গিয়েই প্রাণ হারায় তারা।

চোখে-মুখে স্বপ্ন নিয়ে নিজ দেশ ত্যাগ করে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেন এসব অভিবাসীরা। তাদের অনেকেই নিজ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হওয়ায়, অনেকেই নিজ দেশ থেকে বিতারিত হয়ে আবার অনেকেই স্বেচ্ছায় একটু ভালো থাকার আশায় ওইসব উন্নত দেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালায়। কিন্তু এ পথ ভয়ঙ্কর, যা পাড়ি দেওয়া মোটেও সহজ নয়। অনেকে না জেনেই এ পথে পাড়ি জমাচ্ছেন। আবার অনেকে হয়তো বা জেনেই পাড়ি দিচ্ছেন এ পথ।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *