ভাইয়ের লেখাপড়ার জন্য গার্মেন্টস চাকরি নেন নিহত শিক্ষক সেলিমের দুইবোন
ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের আবেদন
ফুলবাড়ীগেট প্রতিনিধি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের জন্য আবেদন করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার খানজাহান আলী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রবীর কুমার বিশ্বাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুকে অস্বাভাবিক হিসেবে চিহ্নিত করায় বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসে। বিষয়টি নিয়ে কুয়েটের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ায় মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় করার জন্য থানায় বিষয়টি জিডিভুক্ত করা হয়েছে। এই জিডির পরিপ্রেক্ষিতে খানজাহান আলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) শাহরিয়ার হাসানের ওপর তদন্তের ভার ন্যস্ত করা হয়। যেহেতু সেলিম হোসেনের লাশ দাফন হয়ে গেছে তাই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের একটি মাত্র উপায় লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করা। এজন্য বিজ্ঞ আদালতের স্মরণাপন্ন হতে হবে। সে কারণে ওসি তদন্ত মূখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ময়নাতদন্তের আবেদন করেছেন।
থানা সূত্রে জানা যায়, ড. মো. সেলিম হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোন পক্ষই মামলা করেনি। যে কারণে আদালত মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেননি।
আদালত থেকে জানানো হয়, বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের এখতিয়ারভুক্ত। এজন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপর খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। মরদেহ যেহেতু কুষ্টিয়াতে দাফন করা হয়েছে তাই খুলনার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবেদনটি কুষ্টিয়ার জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠাবেন।
এদিকে একাধিক সূত্রে জানাযায়, কুয়েট শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেন দরিদ্র পরিবারের সন্তান ছিলেন। বাবা শুকুর আলী তার লেখাপড়ার খরচ যোগাতে ব্যর্থ হলে গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছিলেন তার দুই বোন শিউলি ও শ্যামলি। মুঠোফোনে কথা হয় বোন শিউলির সঙ্গে। একটু কথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন তিনি। শিউলি বলেন, মা বেঁচে নেই, আমার মেধাবী ভাইটাকে তারা মানসিক নির্যাতন করে মেরে ফেলেছে। কী দোষ ছিল আমার ভাইয়ের। শিউলি জানান, তারা পাঁচ ভাই-বোন, বড় ভাই গার্মেন্টে চাকরি করেন। তারপর সেলিম। এরপর তারা তিন বোন। ভাইয়ের পড়ালেখার খরচ জোগাতে বাবাকে হিমশিম খেতে হতো, পরে শিউলি ও শ্যামলি ঢাকা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে চাকরি নেন ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে। ২০১১ সালে মা মারা যায়। সে সময় ভাই সেলিম আগলে রেখেছিলেন সবাইকে। সেলিম চাকরি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের গার্মেন্ট থেকে চাকরি ছাড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে এসে বিয়ে দেন। সেলিমের বাবা শুকুর আলী বর্তমানে শারিরিক ভাবে খুবই অসুস্থ। ছেলেকে হারিয়ে দুচোখে অন্ধকার দেখছেন বাবা।
তিনি আরও বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, আমার ভাইকে রুমে নিয়ে ৪৫ মিনিট আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশের ফুটেজ আছে, কিন্তু বের হওয়ার ফুটেজ কোথায় গেল? তিনি দাবি করেন বের হওয়া ফুটেজসহ সকল ফুটেজ কুয়েট কর্তৃপক্ষ গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটির কাছে হস্তান্তর করলে সেখান থেকে রহস্য উদঘাটন হবে বলে তার ধারণা।