ভদ্রা নদীর উপর চটচটিয়া সেতু : ডুমুরিয়াসহ চার উপজেলার যোগাযোগে পাল্টে যাবে দৃশ্যপট
ডুমুরিয়া প্রতিনিধি
ভদ্রা নদীর উপর নির্মিতব্য চটচটিয়া ব্রীজের নির্মাণকাজ শেষ হলেই খুলনার দক্ষিণের তিন উপজেলা ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জনসাধারনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভোগান্তি কমবে। সেতুটির ৭৫ ভাগ ইতোমধ্যে নির্মাণ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের শেষদিকে এটি জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। প্রায় সাড়ে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি বাস্তবায়ন করছে স্থাণীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। গত বছর ৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনা সার্কিট হাউস মাঠে ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে চটচটিয়া-শিবনগর ব্রীজটির উদ্বোধন করেন।
ভদ্রা নদীর ওপর চটচটিয়া-শিবনগর সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলেই খুলনা জেলার কয়রা, পাইকগাছা ও ডুমুরিয়া উপজেলা এবং সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলা উপজেলাবাসীর দুর্ভোগ কমে যাবে। সাশ্রয় হবে সময়, অর্থ ও শ্রম। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গত বছর ৩১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ব্যয়ে ডুমুরিয়া উপজেলার বসুন্দিয়া বাজার হয়ে (চটচটিয়া-শিবনগর) সড়কের ভদ্রা নদীর ওপর ৩১৫ দশমিক ৩০ মিটার লম্বা পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে। ইতিমধ্যে সেতুর ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন সড়ক দীর্ঘ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বিশাল বাজেটের এ সেতুটি নির্মাণ কাজ চলছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা মনোজ কুমার সরকার জানান, এলাকাবাসীর দাবি ছিল, উপজেলার চটচরিয়া-শিবনগন ভদ্রা নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের। খুলনা জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষিজ পণ্য উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। খেয়া পারাপারসহ মানুষের নানামুখী দুর্ভোগ লাঘবে পণ্য আনা নেয়া ও যাতায়াতের জন্য সেতুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
কয়রা উপজেলার বাসিন্দা রিয়াসাত আলী বলেন, মাছের ভান্ডার হিসেবে পরিচিত সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা-গাইকগাছা উপজেলা। তাদের খুলনা শহরে চলাচল করতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সকালে গিয়ে রাতে ফেরা দুরহ হয়ে পড়ে। সেতুটির নির্মাণ শেষ হলেই সড়ক পথে যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি মৎস্য, চিকিৎসা নিতে যে ভোগান্তি হয় সেটি আর হবে না।
ডুমুরিয়া শহীদ স্মৃতি মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, চটচটিয়া-শিবনগর খেয়া পারাপারে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বিভিন্ন চাকরিজীবী, চিকিৎসা, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যসহ বিভিন্ন মালপত্র পারাপারে দুর্ভোগের অন্ত নেই।
আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট প্রতাপ কুমার রায় বলেন, বর্তমান সরকারের সময় চটচটিয়া-শিবনগর এলাকায় ভদ্রা নদীর ওপর সেতু নির্মাণে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের সবচেয়ে বড় দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস জানান, ২০২০ সালের জুলাইয়ের মধ্যে সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। সে লক্ষে সেতুটির নির্মাণ কাজ দ্রæতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি।
খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া-ফুলতলা ও খানজাহান আলী থানার একাংশ) আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শিক্ষাবিদ নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, খুলনার দক্ষিণের তিন উপজেলা ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা কৃষি ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর। তাদের যোগাযোগের ক্ষেত্রে চরম ভোগান্তি হয়। দীর্ঘ পথ যানবাহনে চলাচল করতে একদিকে যেমন সময় ও অর্থ ব্যয় হয় অপরদিকে ভোগান্তিও হয়। সেদিক বিবেচনা করে বর্তমান সরকার আমলে সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেতুটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষেরা সহজে খুলনা শহরে যেতে পারবে।