October 18, 2024
জাতীয়

ব্র্যাক ব্যাংক থেকে অবসরে আবেদ দায়িত্ব পেলেন আহসান মনসুর

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ব্র্যাকের পর ব্র্যাক ব্যাংক থেকেও অবসরে গেলেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ; ছাড়লেন চেয়ারপারসনের পদ। তার বিদায়ে ব্র্যাকের পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারপারসনের পদে এসেছেন অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। যিনি ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন।

গতকাল সোমবার ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ ব্যাংকটির চেয়ারপারসন ও পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার স্থলাভিষিক্ত হবেন আহসান এইচ মনসুর। ২৬ আগস্ট সোমবার থেকে আহসান এইচ মনসুর এই দায়িত্ব পালন করেবন।

ব্র্যাক ব্যাংকের পরবর্তী নেতৃত্ব নির্ধারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফজলে হাসান আবেদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি ব্র্যাক ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন; ২০০১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে পুনরায় পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ফজলে হাসান আবেদের নেতৃত্বে ব্র্যাক ব্যাংক ব্যাংকিং খাতে দেশের অন্যতম সেরা ব্যাংক হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা সাধারণ মানুষকে অর্থনীতির মূলধারায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে ব্র্যাক ব্যাংক লক্ষ্যণীয় অবদান রেখেছে। তিনি দ্রুত পরিবর্তনশীল ব্যাংকিং খাতে টিকে থাকতে ভবিষ্যতমুখি পরিকল্পনার ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁর নেতৃত্বে ব্র্যাক ব্যাংক সর্বাধুনিক, গ্রাহক বান্ধব ও উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

ফজলে হাসান আবেদ বলেন, অনেক বছর যাবৎ আমি ব্র্যাক ব্যাংকে আমার পরবর্তী নেতৃত্ব নিয়ে অনেক ভেবেছি এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছি। নতুন নেতৃত্ব তৈরি করা এবং পর্যায়ক্রমে ব্র্যাকের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যোগ্য নেতৃত্বের কাছে হস্তান্তর করা এই প্রক্রিয়ার অংশ।

এখন আমার বয়স ৮৩ বছর। আমি মনে করি, এখনই ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়ার উপযুক্ত সময় এবং ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্সিয়াল সেক্টরে অভিজ্ঞ একজনকে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব অর্পণ করা উচিত।

আহসান মনসুর ২০১৭ সালে ব্র্যাক ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে পরিচালনা পর্ষদে যোগদান করেন। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক তিনি।

তিনি ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলে (আইএমএফ) দীর্ঘ কর্মজীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮১ সালে তিনি আইএমএফ এ যোগদান করেন। ১৯৮২ সালে কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন ওন্টারিও থেকে অর্থনীতিতে (জেনারেল ইক্যুলিব্রিয়াম) পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি আইএমএফের কর্মকর্তা হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া, আফ্রিকা ও সেন্ট্রাল আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

ড. মনসুর ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে আইএমএফের রেসিডেন্ট রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীর ফিসক্যাল (রাজস্ব) উপদেষ্টা ছিলেন।

নতুন পর্ষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন সম্পর্কে স্যার ফজলে হাসান আবেদ বলেন, ‘মসিং মিডল’ জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অগ্রসরের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন প্রয়োজন।

দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি বজায় রাখার জন্য উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি ড. মনসুরের নেতৃত্বে ব্যাংকের ভিশনের আলোকে ব্র্যাক ব্যাংক এই সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি ও প্রসার অব্যাহত রাখবে।

নতুন দায়িত্ব গ্রহণ সম্পর্কে আহসান মনসুর বলেন, ফজলে হাসান আবেদ দেশের একজন অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব। তাঁর পদ গ্রহণ করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রতিষ্ঠান নির্মাণে তাঁর রয়েছে আগধারণ ও পরীক্ষিত দক্ষতা। আমার উপর আস্থা রেখে আগামী দিনে ব্র্যাক ব্যাংককে সামনে এগিয়ে নেবার দায়িত্ব আমাকে অর্পণ করায় আমি স্যার ফজলে হাসান আবেদ এবং পর্ষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

আমি জানি ব্র্যাক ব্যাংক ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং বাংলাদেশের সেরা ও আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকে পরিণত হবার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ফজলে হাসান আবেদের ভিশন অনুযায়ী ব্র্যাক ব্যাংক আগামী দিনেও এসএমই খাতে অগ্রাধিকার অব্যাহত রাখবে।

আমি আশা করি ব্র্যাক ব্যাংককে বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকে পরিণত করার ফজলে হাসান আবেদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি ব্র্যাক ব্যাংকের পর্ষদ, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পাব।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *