ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত সৌম্য, আফগানদের উড়িয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ
গ্রুপ পর্বের দাপুটে পারফরম্যান্স সেমি-ফাইনালেও ধরে রাখল বাংলাদেশ। সৌম্য সরকার ধরে রাখলেন ব্যাটে-বলে ধারাবাহিকতা। সেমি-ফাইনালের গেরো কাটিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবার পা রাখল ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপের ফাইনালে।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট হোক বা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তানের কাছে কম নাস্তানাবুদ হয়নি বাংলাদেশ। এবার উদীয়মানদের ক্রিকেটে অন্তত পাত্তা পেল না আফগানরা। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশ জিতেছে ৭ উইকেটে।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার আফগানদের ২২৮ রানে আটকে রেখে বাংলাদেশের উদীয়মানরা জিতেছে ৬১ বল বাকি রেখে।
বাংলাদেশের জয়ের নায়ক অবশ্য উদীয়মান কেউ নন। বল হাতে ৩ উইকেট ও ব্যাটিংয়ে ৫৯ বলে ৬১ রান করে ম্যাচের সেরা সৌম্য সরকার।
অনূর্ধ্ব-২৩ টুর্নামেন্ট হলেও বেশি বয়সী চার জন খেলানোর নিয়ম আছে। সৌম্যকে নির্বাচকরা এই আসরে নামিয়েছেন রান করে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে। সৌম্যর ব্যাটে সেই বিশ্বাসের ঝলক দেখা যাচ্ছে বটে! গ্রুপ পর্বে হংকংয়ের বিপক্ষে করেছিলেন ৭৪ বলে অপরাজিত ৮৪, ভারতের বিপক্ষে ২ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ৬৮ বলে ৭৩।
সেমি-ফাইনালে অবশ্য সৌম্য দৃশ্যপটে আসার আগেই আফগানদের চেপে ধরেন হাসান মাহমুদ। উইকেটে হালকা ঘাসের ছোঁয়া ছিল। নতুন বলে হাসান আদায় করে নিয়েছেন কিছুটা মুভমেন্ট। বাড়তি বাউন্স তো বরাবরই তিনি পেয়ে থাকেন। উইকেট না পেলেও নতুন বলে বেশ ভালো করেছেন সুমন খান। দুই পেসার মিলে নাভিশ্বাস তুলে ছাড়েন আফগান ব্যাটসম্যানদের।
টস জিতে বোলিংয়ে নামা বাংলাদেশকে প্রথম ওভারেই উইকেট এনে দেন হাসান। ৬ ওভারের প্রথম স্পেলে উইকেট নেন তিনি আরও দুটি।
প্রথম পরিবর্তিত বোলার সৌম্যও যখন যোগ দেন উইকেট শিকারে, ১২ ওভার শেষে আফগানদের স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৩৬।
অধিনায়ক সামিউল্লাহ শিনওয়ারিকে নিয়ে এই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন দারবিশ রাসুলি। জুটি যদিও খুব বড় হয়নি। শিনওয়ারিকে ১১ রানে থামান বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম।আফগানদের বড় প্রতিরোধ পর্ব এরপর। ওয়াহিদউল্লাহ শাফাকের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৭ রান যোগ করেন রাসুলি। সপ্তম উইকেটে তারিক স্টানিকজাইয়ের সঙ্গে জুটি ৮৬ রানের।
রাসুলি উইকেট আগলে রেখেছেন যেমন, আলগা বল পেলেই তেমনি উড়িয়েছেন চার ও ছক্কায়। ৮০ বলে ছুঁয়েছিলেন ফিফটি। পরের পঞ্চাশে লেগেছে ৪০ বল। শেষ ওভারে যখন আউট হলেন, ৭টি করে চার ও ছক্কায় তার নামের পাশে ১২৮ বলে ১১৪।
২৭ বলে ৩৩ করেন তারিক। শেষ ৫ ওভারে আফগানরা তোলে ৫২ রান।
নতুন বলে দুর্দান্ত বোলিং করলেও পুরানো বলে হাসান ও সুমন ভালো করতে পারেননি একদমই।
লক্ষ্য তারপরও বড় ছিল না। তবে শঙ্কা ছিল আফগানদের বিপক্ষে মানসিকতা নিয়ে। মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও সৌম্যর শুরুটা উড়িয়ে দেয় সেই শঙ্কা।
দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে নাঈমের শুরু, ওই ওভারেই পুল করে বাউন্ডারি মারেন সৌম্য।
তিন চারে ১৭ করে নাঈম বিদায় নিয়েছেন বেশ বাইরের বল পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে। তবে সৌম্য ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে ছিল একই দাপট। দ্বিতীয় উইকেটে দুজন ১০৭ রানের জুটি গড়েন দারুণ সব শটের প্রদর্শনীতে।
৩টি করে চার ও ছক্কায় ৬১ করে সৌম্য ফেরেন লেগ স্পিনার আব্দুল ওয়াসির বলে বোল্ড হয়ে। অধিনায়ক শান্ত ৬৮ বলে ৫৯ করে ফেরেন ওয়াসির বলেই।
বাকি পথটুকু অনায়াসে পাড়ি দেন ইয়াসির আলি চৌধুরি রাব্বি ও আফিফ হোসেন। ৫৬ বলে ৩৮ রানে অপরাজিত থাকেন ইয়াসির, ৩৬ বলে অপরাজিত ৪৫ আফিফ।
শনিবার এই মাঠেই ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান ইমার্জিং : ৫০ ওভারে ২২৮/৯ (মালিক ১, শহিদউল্লাহ ৩, শওকত ১৩, রাসুলি ১১৪, মুনির ২, শিনওয়ারি ১১, শাফাক ৩৩, তারিক ৩৪, ওমরজাই ১*, ওয়াসি ০; হাসান ১০-২-৪৮-৩, সুমন ১০-০-৫৯-০, সৌম্য ১০-১-৫৮-৩, তানভির ১০-১-৩৩-২, মেহোদি ১০-১-২৯-২)।
বাংলাদেশ ইমার্জিং: ৩৯.৫ ওভারে ২২৯/৩ (নাঈম ১৭, সৌম্য ৬১, শান্ত ৫৯, ইয়াসির ৩৮*, আফিফ ৪৫*; ওয়াসি ২/৪৬, ওমরজাই ১/৪০)।
ফল: বাংলাদেশ ইমার্জিং দল ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: সৌম্য সরকার