ব্যাংক বন্ধের গুজবে বিভ্রান্ত হবেন না: কেন্দ্রীয় ব্যাংক
প্রস্তাবিত ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’ নিয়ে গুজবে বিভ্রান্ত বা আতঙ্কিত না হতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো আমানতকারীর যত টাকাই থাকুক না কেন, এক লাখ টাকার বেশি ফেরত পাবেন না- সোশাল মিডিয়ায় এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই আহ্বান জানানো হয়।
পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের ব্রিফও করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমি আমানতকারীদের আশ্বস্ত করছি, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। তাই যে যাই বলুক না কেন, আতঙ্কিত হবেন না।”
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, তফসিলি ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আমানত সুরক্ষা আইনের আওতায় আনা হলে এর আমানতকারীরা সুরক্ষিত হবেন।
ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ অনুসারে কোনো ব্যাংক অবসায়নে বা বন্ধ হয়ে গেলে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কভারেজের পরিমাণ ১ লাখ টাকা।
আমানত সুরক্ষা আইনের আওতায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আনার উদ্যোগে সোশাল মিডিয়ায় খবর ছড়ায় যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যার যত অর্থই থাকুক না কেন, বন্ধ হলে এক লাখ টাকার বেশি ফেরত পাবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এর ইতিহাসের উপর আলোকপাত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ১৯৮৪ সালে ‘ব্যাংক ডিপোজিট ইনসুরেন্স অর্ডিন্যান্স ১৯৮৪’ জারি করা হয়। সে অনুযায়ী যে কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়নের ক্ষেত্রে আমানতকারীদের আমানতের অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য কভারেজের পরিমাণ ধার্য হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা।
২০০০ সালে ওই অর্ডিন্যান্স রহিত করে ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ (ব্যাংক ডিপোজিট ইনসুরেন্স অর্ডিন্যান্স ২০০০) প্রবর্তন করা হয়। তখন আমানতকারীদের স্বার্থ আরও সুরক্ষিত করতে কভারেজের পরিমাণ বাড়িয়ে এক লাখ টাকা করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, “ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০ এ একজন আমানতকারীর জন্য ইন্স্যুরেন্স কভারেজের পরিমাণ নির্ধারিত থাকলেও কভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধি করার কোনো সুযোগ ছিল না। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তফসিলি ব্যাংকের ন্যায় নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও ডিপোজিট ইন্সুরেন্সের আওতায় আনয়ন এবং ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট ধারা সংযোজনপূর্বক ‘ব্যাংক আমানত বীমা আইন, ২০০০’ সংশোধন করে ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।”
প্রস্তাবিত ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’ তে কভারেজের পরিমাণ সময়ে সময়ে বৃদ্ধি/নির্ধারণ করার ক্ষমতা ট্রাস্টি বোর্ড তথা বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক কোন তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত ঘোষণা করা হলে অনধিক ১৮০ দিনের মধ্যে আমানতকারীদের প্রাপ্য টাকা আমানত বীমা ট্রাস্ট তহবিল হতে পরিশোধ করা হবে।
এছাড়া, বর্তমান বীমা তহবিলে সংরক্ষিত টাকার পরিমাণ অনুযায়ী ৯২ শতাংশ আমানতকারীর হিসাব সম্পূর্ণ বীমাকৃত। এর বাইরেও, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১’ এর ৭৪ ধারা অনুসারে কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত হলে ওই ব্যাংকের সম্পদ হতে সব আমানতকারীর পাওনা পরিশোধের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’ প্রবর্তনের পর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীরাও এ অধিকার প্রাপ্য হবেন। তাছাড়া কভারেজের পরিমাণ দ্বিগুণ করা সম্ভব হলে প্রায় ৯৬ শতাংশ আমানতকারী সম্পূর্ণ বীমাকৃত হবে।
“উপরন্তু আমানত সুরক্ষা ট্রাষ্ট তহবিলের অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সরকারি ট্রেজারি বন্ড খাতে বিনিয়োগ করা হয়ে থাকে এবং উক্ত বিনিয়োগ হতে প্রাপ্ত মুনাফা ও তফসিলি ব্যাংকসমূহ কর্তৃক প্রদত্ত প্রিমিয়ামের মাধ্যমে তহবিলের অর্থ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ভবিষ্যতে শুধুমাত্র এই তহবিল হতেই শতভাগ আমানতকারীর আমানত বীমার আওতায় আসবে বলে আশা করা যায়।”
‘আমানত সুরক্ষা আইন, ২০২০’ তে তফসিলি ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আমানত সুরক্ষার আওতায় আনার বিষয়টি তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এমতাবস্থায়, বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দ্বারা জনগণকে বিভ্রান্ত বা আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।”
বিকালে বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর সন্ধ্যায় ব্রিফিংয়েও একই কথা বলেন সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “মাত্র ৮ শতাংশ ব্যাংক আমানতকারীর হিসাব বিমাকৃত নয়। অর্থাৎ ৮ শতাংশ আমানতকারী ঝুঁকিতে আছেন। এছাড়া বাকি ৯২ শতাংশ আমানতকারীর হিসাব সম্পূর্ণ বিমাকৃত।”
সিরাজুল ইসলাম বলেন, “কোনো ব্যাংক যদি বন্ধ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ১৮০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীকে এক লাখ টাকা দিয়ে দেবে। বাকি টাকা পরবর্তীতে বন্ধ হওয়া ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীকে পরিশোধ করা হবে।”
নতুন আইনে আমানতকারীদের সুরক্ষা বাড়ানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমান আইনে আমানতকারীরা এক লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে। সংশোধিত আইনে এটি বাড়িয়ে ২ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।”