November 26, 2024
জাতীয়

ব্যাংকের আমানতে মন্দাবস্থা

করোনার প্রাদুর্ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের খারাপ অবস্থা। বেকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। আবার অনেকের কাজ আছে কিন্তু বেতন পাচ্ছেন না। ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা এখন সংসারের খরচ মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন। এর ফলে অনেকে টাকা না জমিয়ে উল্টো তুলে ফেলছেন। অন্যদিকে এপ্রিল থেকে আমানতের সুদহার কমায় নতুন করে ব্যাংকে টাকা জমানোর আগ্রহ কমে গেছে অনেকের। সবমিলিয়ে আগের চেয়ে ব্যাংকগুলোতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের জুন শেষে আগের বছরের একই মাসের তুলনায় আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অথচ গত ডিসেম্বরেও এই প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১২ শতাংশের ওপরে। মহামারির এ অচলাবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে আমানত আরও কমবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৮১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৬ কোটি। সে হিসেবে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতের আমানত ছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা। যা আগের বছরের (২০১৮) একই সময়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি।

উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের দাবি ও বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে দেশের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশে সুদহার বেঁধে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ক্রেডিট কার্ড ছাড়া সব ধরনের ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দিয়ে সার্কুলার জারি করা হয়। যা চলতি বছরের ১ এপ্রিল বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়।

ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়া হলেও আমানতের কোনো সুদহার নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে মৌখিকভাবে আমানতের সুদহার ছয় শতাংশ নির্ধারণ করে নিয়েছে ব্যাংকগুলো। এরপর থেকে আমানত ও ঋণ উভয় ক্ষেত্রে সুদহার কমাতে থাকে ব্যাংকগুলো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তাঋণ ছাড়া মে মাসে ব্যাংক খাতের গড় সুদহার নেমেছে ৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশে। গত এপ্রিলে যা ছিল ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে, যা এপ্রিলে ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

অন্যদিকে ক্রেডিট কার্ড ও ভোক্তা ঋণসহ ব্যাংকিং খাতে মে মাসে গড় সুদহার নেমেছে ৮ দশমিক ১৮ শতাংশে। গত এপ্রিলে যা ছিল ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে নেমেছে, যা এপ্রিলে ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

এদিকে শুধু আমানত নয়, সঞ্চয়পত্রেও বিনিয়োগ কমেছে। একদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে সরকারের নানা শর্তের কারণে কমছে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি। সদ্যসমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১১ হাজার ১১ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সময়ে নিট বিক্রি ছিল ৪৬ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *